আরিফ মঈনুদ্দীন
উপন্যাস (পর্ব ৩১)
তাহারা ফিরিয়া আসিলেন
সকাল হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। আজকে এই বেলায় শফিক সাহেবের কোনো ক্লাস নেই। লাঞ্চের পর একটি ক্লাস আছে। তারপর আবার অবসর। তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছেন- মেয়েকে শাসন করতে চেয়েছেন- তা তো পারেননি। ব্যর্থতা তার গলা চেপে ধরেছে। একটি মাত্র মেয়ে এভাবে বখে যাবে- কেন আগে থেকে বোঝেননি? সব অপরাধ নিজের কাঁধে নিয়েও শান্তি পাচ্ছেন না- প্রীতির কারণে। প্রীতি যদি ঠিক থাকত তাহলে এই অবস্থা হতো না। এখন শেষ চেষ্টা হিসেবে তাকে কৌশলী হতে হবে। পুরোপুরি অভিনয়ের ভেতর ঢুকে যাবেন। মেয়ে এবং তার মাকে কিছুই বুঝতে দেবেন না। তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন- এই পর্যায়ে চলে যাবেন। ব্যক্তিগত প্রশ্ন, কুশলবিনিময় সবক্ষেত্রেই। কৌশল কাজে লাগাতে হবে। প্রীতি নাশতা খেতে ডাকছে। তিনি বিছানা থেকে উঠে হাঁক ছেড়ে বললেন, আসছি।
ডাইনিং টেবিলে বসে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন।
প্রীতি বললেন, মেয়ের দরজায় টোকা দিয়ে ওরে একটু ডাকো। বাপ-মেয়ের ভাব-ভালোবাসা পুনরুদ্ধার হওয়া দরকার। তা না-হলে তো বাস করে আরাম পাবে না।
শফিক সাহেব মনে মনে ভাবছেন, তার কৌশলের প্রথম সবক শুরু হয়ে যাক। মন্দ হবে না। তিনি আগ্রহী মনোভাব দেখিয়ে বললেন, ঠিক আছে যাচ্ছি।
মেয়ের কক্ষের দরজায় টোকা দিয়ে তিনি বললেন, কই রে মা শিউলি, তাড়াতাড়ি আয়। নাশতা খাব, শিউলি...শিউলি...
বাবার কণ্ঠ শুনে শিউলি ধড়মড়িয়ে উঠতে উঠতে বলল, আব্বু তুমি ডাইনিং টেবিলে বসো, আমি আসছি।
শিউলি বাথরুমের বেশিনে গিয়ে চোখেমুখে পানির ছিটা দিতে দিতে মনে একটা উৎফুল্লভাব আনার চেষ্টা করল। সে তার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে- বাবাকে কিছুই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
তিনজনই নাশতার টেবিলে। শিউলি পরিবেশটা হালকা করার জন্য প্রথমেই বলল, আব্বু আমি আবারও সরি। তুমি আমাকে একটু কলেজে নামিয়ে দিও।
শফিক সাহেব বললেন, আমার তো এ বেলায় ক্লাস নেই। তুই গাড়ি নিয়ে যা। আসবি কখন?
লাঞ্চের আগেই আসব।
তাহলে তো বেশ হবে। আমি লাঞ্চের পর বের হবো। তোর লেখাপড়ার কী অবস্থা?
শিউলি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল, আব্বু লেখাপড়া নিয়ে আমার কোনো টেনশন নেই। সব সাবজেক্ট যথারীতি ভালো হবে।
প্রীতি বললেন, এবার আমারও তো কিছু বলা উচিত। তোমরা বাপ-মেয়ে মজা করে আলাপ করছ...
শফিক ঠোঁটে হাসি ধরে রেখে বললেন, হ্যাঁ বলো, তোমার কথাও শুনি। তোমার দুপুরের খাবারের মেনু কী?
প্রীতি অভিমানী সুরে বললেন, আমাকে তুমি তো ওটাই ধরিয়ে দেবে।
শিউলি বাবার পক্ষ সমর্থন করে বলল, আম্মি বাবা তো ঠিকই বলেছেন। তুমি তো আসল কাজটাই করছ। এই যেমন ধরো নাশতা খাওয়াচ্ছ। এরপর এক কাপ ফ্লেভারসমৃদ্ধ চা। কী চমৎকার ধোঁয়া উঠবে!
শফিক সাহেব মেয়ের কথার সূত্র ধরে বললেন, ও হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুমি চা নিয়ে কিছু বলো। এত সুন্দর চা কীভাবে করো, ফর্মুলাটা আমাদেরকে শিখিয়ে দাও।
প্রীতি নারীসুলভ চঞ্চলতা ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন, বা রে শিখতে হবে কেন। আমি তো আছি। চা বানিয়ে খাওয়াব আর বাহবা নেব।
আচ্ছা আমাকে না শেখাও। মেয়েটাকে শিখিয়ে দিও।
এটা বলছ কথা খাঁটি। ওকে শেখাতে হবে। শুধু চা-য়ের ফর্মুলা না। সবকিছুর রেসিপি।
শফিক সাহেব মনে মনে প্রমাদ গুনলেন। সবকিছুর রেসিপির আগে অন্য আরো যা শিখিয়েছ। তাতেই আমার নাভিশ্বাস। আর কী শেখাবে? এখন এসব কিছু বলা যাবে না। তিনি তার প্রজেক্ট নিয়ে এগোচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ মেয়ে তো বড় হয়েছে, তাকে এসব শিখিয়ে-পড়িয়ে নিতে হবে।
শিউলিও মনে মনে একটা কথা হজম করছে। অন্যসময় হলে বলত- কী বলো আব্বু আমি আর কত বড় হয়েছি। কিন্তু এখন এটা বলা যাবে না। সে তো বড় হয়েছে। যার জন্য পুলিশ ডাকতে পেরেছে। এসব কিছু আড়াল করে সে বলল, ঠিক বলেছেন আব্বু। তুমি এসব আমাকে শিখিয়ে দিও।
"