তিন কবির ৬ কবিতা
সৈয়দ নূরুল আলম
উড়ো মেঘ
উড়ু উড়ু করে উড়ো মেঘ,
কখন রাত কাটাবে বনে
সন্ধ্যা নেমেছে অনেক আগে।
মসজিদে আজান, মন্দিরে উলুধ্বনি
ভেঙেছে দিন-রাতের সীমানা।
রাতজাগা পাখি
এখনই বেরোবে
ঝোপের আড়াল থেকে।
মেঘের আমন্ত্রণ পেয়ে
ছুটেছে বিকেল,
গেল রাত উপোস কেটেছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস-
শেষ রাতে প্রচুর বৃষ্টি হবে,
জলে ভেসে যাবে বসতবাড়ি।
ইচ্ছেরা জেগে থাকে
ইচ্ছেগুলো পুরোনো হয় না,
শুধু ইচ্ছেগুলো নষ্ট হয় অনাদরে
আবার সময়ের সাথে সাথে
ইচ্ছেগুলো রং পাল্টায়
কখনো জীবন্ত হয়, পাড় ভাঙে,
নদী হয়ে সমুদ্র হয়।
কিছুই করার থাকে না,
কষ্টগুলো সেখানে, কষ্টগুলো মনের।
কাজী লাবণ্য
হরিণ বিলাপ
উপাসনার নামে যে পরমাশ্চর্য করাতের বিষ
মানুষে মানুষে বীজমন্ত্রিত হয়-
নদীও ঢেউ ভুলে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকে।
গন্দম ফলে যদি সবার বিশ্বাসই থাকে,
তাহলে অমৃতস্য আদমের আওলাদ
এত ভিন পথে হাঁটে কেন!
ওপরওয়ালা দূর বহুদূর আকাশের ওপারে আকাশে হাসে
বজ্রে দৈবাৎ, কখনো সাইক্লোনে, কখনো বা বিলয়ে
অনশ্রু ঈশ্বর করুণা কী শীলা পাথরের কাঠিন্যে
ভাসে ডোবে মাথা কুটে
দূর মেঘের দেউরির ওপারে।
কে কথা কয়?
কয়েকটি ব্যালকনি ঘুমায়নি
ব্যাঙ, কুকুর আর আষাঢ়ের মেঘগুলোও
কল্পনায় আঁকা ঘুমন্ত মানুষের মুখ সুন্দর
কোন পথিক রাস্তা হাটে? কথা কয়? গন্তব্য কোথায়?
পেট পোড়ে, বুক জ্বলে, চোখ ভেজে
এক দিন,
এমন ঘুমন্ত শহর থেকে চটি খুলে বেড়িয়ে যাব নিঃশব্দে,
ঠিক এ রকম এক আষাঢ়ি ভোরে।
ইলিয়াস ফারুকী
জীবন সংজ্ঞা
সবকিছু যেন কীভাবে হারিয়ে যায়,
রাতের লাবণ্য চাঁদনি আলোতে ধায়,
প্রিয়ার খোঁপার রাতের বাঁধন হায়,
সোহাগ শুরুতে বেহায়া এলানো পায়ে।
সবকিছু যেন এমনি মিলিয়ে যায়,
নিদ্রার শুরুটা স্বপ্নের ঠিকানা চায়!
কঠিন পৃথিবী নিজের বুঝটা বোঝে,
নদীর মতন ভাঙার তীরটা খোঁজে।
বাস্তব জগতে সুরের সাগর রেশ,
জীবন সুখেরা দূরের স্বপ্নের দেশ।
জয়ের গান
নিজের খোঁজে ফিলিস্তিন, নিজের মাঝে ফিলিস্তিন। প্রিয়ার ভাবুক গলার মাঝে বুলেট ফুলের কঠিন মালা। চুলের বিনুনি দুলছে দোলন। আকাশ ফাটিয়ে ঝরছে বারুদ। নাই তবুও নাই ক্লান্তির বুদবুদ। শিশু রক্ত, যুবক রক্ত, বুড়ো রক্ত, রক্তের বাগান, একত্রে বহে যেন জর্ডান নদীর স্রোত। তবুও সাইরেনের শব্দের চেয়েও তীব্র স্বরে বাজে ফিলিস্তিনের জয় গান।
"