আবদুল্লাহ জাহিদ
জন্মদিন : রেজাউদ্দিন স্টালিন
পুরাণ প্রাচুর্যের কবি
রেজাউদ্দিন স্টালিন এ সময়ের একজন ব্যতিক্রমী ধারার কবি। প্রচলিত বিষয় ও আঙ্গিকের বাইরে প্রথাবিরোধী চিন্তার অনন্য সমীকরণ তার কবিতা। ভাষা ভিন্ন, চিত্রকল্প আর বাকপ্রতিমার আশ্চর্য প্রকৌশল রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। প্রথাবিরোধী এ পথে প্রাতিষ্ঠানিক প্রণামী কম, কিন্তু সাহিত্যের শক্তিশালী ও
সংযমী ধারা এটি। তার কবিতায় আছে পুরাণের প্রাচুর্য, দার্শনিক সত্য, অসম্ভব বাস্তবতা এবং সম্প্রসারিত বাস্তবতা। জাদুবাদের জগতে তিনি প্রবেশ করেন বাঙালির ঐতিহ্য ভাবনা নিয়ে। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে বিশ্বস্ত যোগাযোগ, একই সঙ্গে তার কবিতায় আছে প্রেম, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক বোধ। রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তার যুদ্ধবিরোধী শান্তিমগ্ন উচ্চারণের জন্য। আন্তর্জাতিক পাঠক অনুবাদের মাধ্যমে তার কবিতা এবং বাংলা কবিতা চেনার সুযোগ লাভ করছে। এটি সত্যিই আনন্দের। আমরা আমাদের ভাষা নিয়ে গর্বিত কিন্তু আমরা আমাদের কবিতা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আজও সেভাবে নিতে পারিনি। রেজাউদ্দিন স্টালিন সেই প্রয়োজনীয় কাজটি করতে চেষ্টা করছেন এবং অনেকাংশে সার্থকতা অর্জন করেছেন।
এই বিশেষ দিনে, আমরা কেবল কবির জন্মই উদযাপন করছি না, সেই সঙ্গে অনেকের হৃদয় স্পর্শ করেছে এমন শব্দ এবং পঙ্ক্তিমালাগুলো উদযাপন করছি। স্টালিনের কবিতা গল্পের চাদর মোড়ানো পরাস্বপ্নের পাদপীঠ। তিনি কবিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সৌন্দর্যকে আলোকিত করেছেন। স্টিভেনসন বলেছিলেন, একজন লেখকের মোহিত করার ক্ষমতা ছাড়া বাকি সবই নিরর্থক।
স্টালিনের কবিতার পঙ্ক্তি পাঠককে মোহিত করে, ভাবায়, নতুন চিন্তার জন্য প্রস্তুত করেও অনুপ্রেরণা জোগায়। সান্ত¡না এবং আনন্দের উৎস যদি কবিতা, বিরহ ও প্রেমের সারাৎসার যদি কবিতা, প্রতিবাদ ও প্রশ্নের প্রতিপাদ্য যদি কবিতা হয়, তবে আমাদের শরণ নিতে হবে রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতার। এ অনিবার্য হয়ে ওঠার অপরিমেয় শক্তির নাম রেজাউদ্দিন স্টালিন। আমি বহু কবিতার আসরে যাই, দেশ-বিদেশে। প্রকৃত কবিদের তালিকা প্রস্তুত হলে রেজাউদ্দিন স্টালিনের নাম থাকে সর্বাগ্রে।
ভাবতে ভালো লাগছে, কেকের মোমবাতি প্রজ্বালনের সঙ্গে সঙ্গে সৃজনশীলতা এবং অনুপ্রেরণার শিখা কবির আত্মায় উজ্জ্বলভাবে জ্বলতে থাকবে। আমরা আরো অনেক সুন্দর কবিতার জন্য অপেক্ষা করছি, যা কবি বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করবেন। কবির দুটি অমর চরণ এখানে উদ্ধৃত করি- ‘কেউ যদি দেয় বিশ্বজোড়া বাড়ি/আমি তো দেব মাত্র দশ হাত লজ্জাঢাকা শাড়ি।’ (অভয়)। কবিতাটির দায়বোধ আমাকে প্রাণিত করে।
২০২৩ সালের এই জন্মদিন কবির জন্য নতুন স্বপ্নের, প্রত্যয়ের প্রতিফলন হোক। নতুন বছর শুরুর মুহূর্ত হোক কবির অনন্য কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি। প্রজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে জগৎকে ও জীবনকে দেখার প্রখরতা বাড়ুক এবং তিনি সাহিত্য জগৎকে সমৃদ্ধ করতে থাকুন। সীমাহীন সৃজনশীলতায় ভরে উঠুক কবিতার খাতা।
কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন আপনাকে বিশ্বসাহিত্যের পীঠস্থান আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে অভিবাদন। দুর্দান্ত জন্মদিন এবং আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের শুভেচ্ছা জানাই।
"