শারমিন সুলতানা রীনা

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জন্মদিন : দীলতাজ রহমান

প্রথা ভাঙার লেখক

দীলতাজ রহমান আমার বড় বোন। যার নামটি লেখক-পাঠক কমবেশি জানেন। তিনি কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর পর থেকে গল্প লেখা শুরু করেন। তার গল্পের বই বিশের কাছাকাছি। বেশ কিছু কবিতার বইও আছে। তাতে আছে অনেক ভালো লাগার কবিতা। দীলতাজ রহমান গল্প লিখতে ভালোবাসেন। ছোট গল্পের চিরাচরিত সংজ্ঞা ভেঙে তিনি যা লেখেন, এটা তারই গল্প হয়ে যায়। কারণ গল্প থেকে তার নামটি বাদ পড়লেও বোঝা যায়, গল্পটি দীলতাজ রহমানের। তার গল্প পড়তে হলে শুরু থেকে পাঠককে মনোযোগী হতে হয়। কারণ প্রতিটি গল্পে এত চরিত্র তিনি টেনে আনেন, অমনোযোগী পাঠক তাতে খেই হারান। কিন্তু মনোযোগী পাঠক তার থেকে যা উদ্ধার করে আনতে পারেন, সে অনুভূতি যেকোনো উপন্যাসকে হার মানানোর মতো। দীলতাজ রহমান গল্পে এই পারঙ্গমতার জন্যই হয়তো উপন্যাস লিখতে মনোযোগী হন না। তবে তার ঔপন্যাসিকা আছে কয়েকটি।

অনেকের মতো আমিও দীলতাজ রহমানের গল্পের মুগ্ধ পাঠক। তার যেকোনো একটি গল্পে ঢুকলে, তার বই নাকি হাত থেকে রাখা যায় না, এটা তার পাঠকের কথা। দীলতাজ রহমানের গল্পের বিষয়বস্তুর ভেতর প্রধান যা, তা তিনি নারীর বহুমাত্রিক শক্তিকে যেন ভেঙে ভেঙে দেখিয়ে তা দিয়ে নারীকে ধাতস্থ করেন। গল্পে কল্পিত পাত্র-পাত্রীর সংলাপ দিয়ে তাদের মাধ্যমে নারীর নিজের শক্তির উৎসে নারীর দৃষ্টি নিবদ্ধ করান। তিনি নারীর শক্তিই নারীকে চিনিয়ে দেন তাবৎ বেয়াড়া পুরুষকে বাগে রাখতে। নারী-পুরুষের সহাবস্থানে পৃথিবীটা তিনি শান্তির ধাম করার সহজ পরামর্শ নন্দনতত্ত্বের মোড়কে জোরালোভাবে বাতলে যান। যাতে পুরুষের বিরুদ্ধে নারীর কোনো ধরনের বিষোদ্গারের লেশ না থাকে। তার প্রতিটি গল্পই মানুষের বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি।

দীলতাজ রহমানের গল্প নিয়ে বড়দের কথা বলা উচিত। বলেনও কেউ কেউ। তবে লিখে বলার দায় কে নেবেন? এখন তো সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। আর তাই তো মুড়ি-মুড়কির দাম সমান হয়ে গেছে। যদিও আবর্জনার জোয়ারে পাথরগুলো ভেসে যায় না। তলিয়ে থাকে। সময়ই হয়তো সেসব ভাসিয়ে তুলবে!

কথাসাহিত্যিক দীলতাজ রহমানের প্রতি আমার সমীহ এ কারণেও অপরিসীম, তিনি আজ পর্যন্ত নিজের কোনো বইয়ের প্রকাশনা উৎসব করেননি। ছলেবলে কাউকে প্ররোচিতও করেননি লিখতে। তিনি বলেন, ‘যদি কোথাও কোনো পাঠকের মনে আমার লেখার এতটুকু রেশ জড়িয়ে থাকে, ওইটুকুতেই আমি আজীবন সন্তুষ্ট। অন্যকে ডেকে এনে নিজের প্রশংসা শোনার চেয়ে ওটুকুই আমার বিশুদ্ধ বাসনা!’

কোনো অনুষ্ঠানে গেলে যারা বিষয়টি জানেন না যে, আমি দীলতাজ রহমানের বোন, কিন্তু চেহারা দেখে তারা অনেকে প্রশ্ন করেন, আমি দীলতাজ রহমানের কিছু হই কি না! আমি তার বোন তা জানার পর তারা দীলতাজ রহমানের গল্পের প্রশংসা করতে থাকেন! আসলে এ বিষয়টি জীবনকে পরম প্রসাদিত করে রাখে, লিখতে না এলে বোঝার উপায় ছিল না। আর তাই আমি আমার আপার প্রতি এজন্যও কৃতজ্ঞতাবোধ করি। লেখালেখি করি বলে এই যে এত বিদগ্ধজনের কাছাকাছি আসতে পারছি, তা না করলে সে জীবন অপাঙ্ক্তেয় থেকে যেত। বড়কথা, নিজের ভেতর সৌন্দর্যবোধের যে বিকিরণ টের পাই, তারই উৎস যেন অবচেতন মন বিশ্বময় খুঁজে ফেরে। এভাবে সবকিছুর সঙ্গে, সবার সঙ্গে যে একটা একাত্মতা তৈরি হয়, তাতে মনে হয়- আমিও তো আছি, আমারই মতো বহু মানুষের চেতনায়-স্মৃতিতে। তার ওপর নিজের বোন যে-অঙ্গনে আছে, আমিও সেখানে বিচরণ করতে পারছি। আজ আমার আপার জন্য লিখতে লিখতে বিষয়টি এভাবে আমার মনে ব্যঞ্জিত হলো। আজ সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকন বেঁচে থাকলে আপার জন্য যা লিখতেন, আমি তা পারলাম না। কারণ খোকনের কাছে আমার আপা ছিলেন সবচেয়ে শ্রদ্ধার ব্যক্তি। আপার মাধ্যমেই খোকনের সঙ্গে আমার পরিচয়। অতএব, শুধু মানস গঠন নয়, আপার সাহিত্য আমার ভাগ্যও বদল করে দিয়েছে। অনেক কিছুই উত্তরাধিকার সূত্রে অগ্রজের থেকে পাওয়া যায়, কিন্তু সৃষ্টিশীলতার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞার উত্তরাধিকার দেওয়ার ক্ষমতা দুর্লভ কিছু মানুষের থাকে। তাই আমার আপা আমার কাছে দুর্লভদের একজন।

রমরমা পরিচয়ে দীলতাজ রহমান মহীরুহ হয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু সৃষ্টিতে তিনি যথার্থই এবং তার জীবনের যে ব্যাপ্তি, অনেকেই তা জানলে শিহরিত হবেন। তিনি একজন নারী উদ্যোক্তাও বটে! ‘বিট মাস্কট’ ফার্মটি আন্তর্জাতিক মানের। দীলতাজ রহমান তার চেয়ারম্যান। বিট মাস্কট নামের সফটওয়্যার ফার্মটি এ দেশের বহু মেধাবী যুবকের কর্মসংস্থান করেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা এনে সমৃদ্ধিতে অংশীদারত্ব করছে।

ঘুরে-ফিরে দীলতাজ রহমানের সৃষ্টির কথা আবার বলি, তার যেকোনো একটি গল্প যিনিই পড়বেন, দীলতাজ রহমান নামটি তার মন থেকে মুছবে না! তার মাত্র একটি গল্পের পাঠকও তাকে সারাজীবন মনে রাখতে সক্ষম। তাকে নিয়ে কাঁচা হাতের লেখায় এ অনুভূতি ব্যক্ত করতে পেরে আমি কৃতার্থবোধ করছি!

দীলতাজ রহমানের গল্পগুলো প্রকৃত পাঠকের হাতে পৌঁছাক। স্বনির্মিত, শুভ চেতনার, সাদামনের এ মানুষটির যথার্থ মূল্যায়ন হোক, তার লেখক জীবন সফল হোক, সৃষ্টিশীলতা বহমান রেখে দীর্ঘজীবী হোন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close