রুখসানা কাজল

  ০২ জুন, ২০২৩

ধারাবাহিক উপন্যাস- ২২

বায়োস্কোপ

মুখে বাম, হাতে ডান ইনুদের বুদ্ধিজীবী চক্রটি তখন ওদের চিরশত্রু মুনাফাখোর বেনিয়াদের পকেটে ফি সাবিলিল্লাহ ইয়া সুবানাল্লাহ বলে ঢুকে কিছু তোয়াজি স্ক্যাম ঢেলে পেঁয়াজি হাসি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ সুবানাল্লাহ্ বলে ফের বেরিয়ে আসছে।

মিতিল এগোচ্ছিল বেশ ভালো করেই। হঠাৎ কি যে হলো! পিএইচডি তো দূর কি বাত। এমফিলে ভর্তি হয়েই এক ভবঘুরে কামচোর সুদর্শন কথা কাকাতুয়া কবিকে বিয়ে করে সংসার সংসার খেলায় ঢুকে পড়ল। এ বিয়েতে রাজুর মত ছিল না। তবে মতামত প্রকাশ করার মতো পরিবেশও তখন বজায় ছিল না ওদের পরিবারে। কেননা তদ্দিনে সংসারের প্রত্যেকেই ওরা একে অন্যের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই হয়ে উঠেছিল মহাস্বাধীন। মুক্তমনার নামে স্বেচ্ছাচারী। তবে যে যার কর্মে আত্মবিশ্বাসী। ভালো কিছু হলে সবাই সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যে যার মতো কাজকর্মে চলে যাচ্ছিল। আবার ভুল হলে হয় হোক গে আমার জীবন আমি বুঝব, তোমার এত মাথাব্যথা কেন শুনি টাইপ যুগের শুরু হয়ে গিয়েছিল ইনু পূরবীর সংসারে! ধীরে ধীরে একটি নির্লিপ্ত দিনযাপনের শক্ত চক্রে ওরা ঢুকে যাচ্ছিল তখন।

তবে মিতিলের প্রথম বিয়েটা টিকেছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। মাত্র চৌদ্দ মাসের মাথায় এক সকালে পাঁচ মাসের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছিল মিতিল। যেন খেলা শেষে উপহার পাওয়া একটি জ্যান্ত খেলনা হাতে নিয়ে ঘরে ফিরে এসেছে তাদের মেয়ে। সঙ্গে একটি বড় ও কয়েকটি ছোট স্যুটকেস। পূরবীর দিকে ইনু জিজ্ঞাসু চোখে তাকালে মাথা নেড়ে ইশারায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিল, কী হয়েছে, কী বিত্তান্ত ও কিছুই জানে না।

সত্যিই কিছু জানত না বেচারি। বাবা-মায়ের স্ট্যাচু অবস্থা দেখে হেসে ফেলেছিল মিতিল। তারপর ব্যাগসুদ্ধ বাচ্চাটাকে পিঠের দিক থেকে ঘুরিয়ে বুকের সঙ্গে ফিট করে গরম চায়ে ফুরফুর করে চুমুক দিয়ে মিতিন নিজেই পূরবীকে জানিয়ে দিয়েছিল, র‌্যান্ডম একঘেয়ে লাগছিল মা। এরপর ইনুর দিকে ঘুরে হেসে বলেছিল, মারুফকে তাই একবারে বিদায় করে চলে এলাম ডেডু।

পূরবীর চায়ের কাপ কেঁপে উঠলেও মিতিল কোনো পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে আরামসে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওদের মধ্যে কি হয়েছে এটা জানার জন্য ইনু পরে মারুফকে ডেকে এনেছিল ওর অফিসে। মারুফকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, ওর সাহস বা ইচ্ছা কোনো কিছুই নেই মিতিলকে ফের সংসারে ডেকে নেওয়ার। তা ছাড়া মিতিল ফিরে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করেই এসেছে। মিউচুয়াল ডিভোর্স দিয়ে দুজন এখন দুদিকে বেরিয়ে পড়েছে। ঢাকার পার্ট তুলে সবকিছু গোছগাছ করে মারুফ ফিরে যাচ্ছে দিনাজপুর ওর বাবা-মায়ের সংসারে। মারুফের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইনু খেয়াল করে, মিতিলের বিরুদ্ধে মারুফের মনে খেদ, রাগ, বিরক্তি নালিশ এমনি কোন মায়ার টানও নেই। বরং ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলে বার বার মিতিলকে মারুফ সমর্থন করে যাচ্ছিল। প্রসংশায় ভরে দিচ্ছিল মিতিলের ইন্টেলিজেন্স এবং স্মার্ট ডিসিশন নেওয়ার ক্ষমতাকে। ইনুর একবার মনে হয়েছিল, ছেলেটা আদতে ভীতু। নিতান্ত কাপুরুষ। একদম নিরীহ গো প্রজাতিভুক্ত। মিতিলের কাছে একেবারেই অনুপোযুক্ত বাছুর। পর মুহূর্তে ওর ভাবনার ঘরে অর্জিত অভিজ্ঞতা টক টক করে টনক নাড়াচ্ছিল। বদলে যাচ্ছিল মারুফ সম্পর্কে ওর ধারণা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close