রুখসানা কাজল
ধারাবাহিক উপন্যাস- ১৪
বায়োস্কোপ

প্রতিটি ধর্মেই নারীদের সম্মান করার কথা বলা থাকলেও তাদের স্বাধীনতা ভোগের ব্যাপারে কোনো কথা রাখেনি। নারী শুধুই একখণ্ড জমির মতো। প্রয়োজনে ফসল ফলাচ্ছে আবার অতি প্রয়োজন হলে বিক্রিও করে দিচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই পুরুষ। এ রকম ধর্মবাদে আচ্ছন্ন ভাবনায় বিশ্বাস করে এ দেশের জনগণ সভয়ে কমিউনিজমকে এড়িয়ে চলেছে। যদিও কামারের ঘা মেরে বিপ্লব করার জন্য বাইরে থেকে অর্থ এবং অস্ত্র পেয়েছিল ইনুদের দল। তাতে গুটিকয়েক জোতদার, ভূস্বামী, সংসদ সদস্য কিংবা ধনী ব্যবসায়ীকে খুন করে তারা যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বার্তা দিয়েছিল, তাতে এ দেশের জনগণ তাদের ডাকাত হিসেবেই গণ্য করে নিয়েছিল। একাত্তরের পর অনেকেই ওদের শিক্ষিত ডাকাত, নকশাল ডাকাত, আন্ডারগ্রাউন্ড ডাকাত বলে ভয় পেত। পরে এসব দল অভ্যন্তরীণ স্বার্থে অন্ধ হয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল দল উপদল অণুদলে। এমনকি একদল আরেক দলের নেতাকর্মীর সন্ধান জানিয়ে দিয়েছিল পুলিশ এবং রক্ষীবাহিনীকে। আবার কেউ কেউ নিজেরাই খুনোখুনি করে মরে গিয়েছিল ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং লোভে।
রুমকি সরাসরি রাজনীতির পথে হাঁটেনি। ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বাম রাজনীতির স্লোগানধারী কয়েকটা দলকে যারা ইনডাইরেক্টলি নেতৃত্ব দেয় ও তাদের একজন। অর্থাৎ মাস্টারমাইন্ড গোছের। এদের সঙ্গে প্রকাশ্যে কোনো সভা-সমিতি বা আন্দোলন-সংগ্রামে যোগ দেয় না। সব সময় দেশের মূল বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে থাকে। মাঝেমধ্যে সেই বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বড় বড় ইস্যুতে শাহবাগ বা দেশের অন্যান্য ভেন্যুতে বক্তৃতা করে। কখনো মোমবাতি জ্বেলে নির্যাতিত নারীদের পক্ষে নীরব পদক্ষেপে হেঁটে আসে। কখনো শ্রমিক নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে কথা বলে। বক্তৃতার সময় প্রচুর তাত্ত্বিক যুক্তি দিয়ে শুরু এবং শেষ করে রুমকি। সেখানে পৃথিবীর নানা মনীষীদের লাগসই কোটেশনগুলো উল্লেখ করে, নিজের দেশের সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী আচরণের কড়া সমালোচনা করে। তাতে যেকোনো সময়ের ক্ষমতাসীন যেকোনো দলের বিপক্ষে শানিত যুক্তি তুলে ধরে। অযথা চেঁচিয়ে মাঠ গরম করা কথা বলে না। ক্ষমতাসীন দলও ওর বক্তৃতা সতর্ক মনোযোগ দিয়ে শোনে। ইনু জানে, আওয়ামী লীগের ভোগবাদী অংশের একজন বিশুদ্ধ এবং একনিষ্ঠ সমালোচক হচ্ছে রুমকি ইনামদ্দিন হাসান। আর আওয়ামী লীগের তো দোষের অভাব নেই। যাবতীয় সাফল্যকে ছাড়িয়ে স্বজনপ্রীতি এবং স্বজন তোষণ এ দলের পুরোনো অভ্যাস ও দুর্বলতা। উনিশ শ বাহাত্তরে যে বিভেদ এসেছিল, তা এই স্বজন তোষণকে কেন্দ্র করেই এসেছিল। ইনু জানে না রুমকি কখন, কীভাবে এ রাজনীতির সঙ্গে ভিড়ে গেল! দিন দিন ঝানু হয়ে উঠছে। আজকাল অনেকেই রুমকি এন হাসানের বাবা হিসেবে ইনুকে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিশেষ করে উঠতি তরুণ বুদ্ধিজীবীদের কাছে রুমকির পরিচয়েই সে বেশি পরিচিত। এসব সময়ে ইনুর ফিলিংস হয় ব্লিচিং পাউডারের সঙ্গে নুনচিনি গোলা শরবত খাওয়ার মতো।
এখন পর্যন্ত বিয়ে করেনি রুমকি। ইচ্ছে হলে করবে না হলে করবে না বলে সাফ্ জানিয়ে দিয়েছে ওর মাকে। বারকয়েক লিভ-টুগেদার করলেও স্থায়ী কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি। রুমকি জানে, ছাত্রছাত্রী এবং সাংবাদিকদের কেউ কেউ আড়ালে-আবডালে ওকে বাইসেক্সুয়াল ম্যাম বলে ডাকে। এ রকম হলেও বা কী। পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে বড় হয়েছে তার মেয়েরা। তা ছাড়া যৌনতা একটি উপভোগের ব্যাপার।
"