শেলী সেনগুপ্তা

  ২৫ নভেম্বর, ২০২২

রবীন্দ্র মানসে লাবণ্য ও বিজয়া

বিজয়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিজয়া, যার আসল নাম ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। জন্ম ৭ এপ্রিল ১৮৯০ সালে। যিনি নিজেও একজন বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও সাহিত্য সমালোচক। রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন ৬৩, তখন ওকাম্পোর ৩৪ বছর।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এর পরপরই রবিঠাকুরের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত গীতাঞ্জলি কাব্য পাঠ করে ওকাম্পোও তার ভক্ত হয়ে ওঠেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর দেখা হয়েছিল ১৯২৪ সালে। সে সময় তিনি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। দু’মাসেরও বেশি সময় রবীন্দ্রনাথ ওকাম্পোর যত্ন ও সেবা গ্রহণ করেছিলেন। বাগানে বসে গল্পগুজব, চা-পান আর সাহিত্য আলোচনায় সময় কাঠাতেন। ওখানে অবস্থানকালে তিনি ৩০টির মতো কবিতা রচনা করেছিলেন, যা ঠাঁই পেয়েছিল তার ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থে। রবিঠাকুরের ভাষ্য মতে এটি তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা, যা তিনি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে উৎসর্গ করেছিলেন।

ওকাম্পোর সান্নিধ্যে থাকার সময় যেসব কবিতা রচনা করেন রবীন্দ্রনাথ, তার সবগুলোই ছিল মাত্রাতিরিক্ত রোমান্টিক। ওকাম্পোর সান্নিধ্যমুগ্ধ রবিঠাকুর তাকে ‘বিজয়া’ নামে সম্বোধন করতেন।

অনেকের ধারণা, রবিঠাকুরের অমর প্রেমের উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’ তার নিজ জীবন নিয়ে লিখেছিলেন। তার ‘বিজয়া’ এখানে ‘লাবণ্য’ নামে বিকশিত হয়েছিলেন। ‘বিজয়া’ ও ‘লাবণ্য’ আত্মনির্ভর, সাহসী এবং স্বাধীনতাকামী। বিজয়ার মধ্যেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন লাবণ্যকে।

রবিঠাকুর এবং ওকাম্পো দুজন দুজনকে প্রভাবিত করেছিলেন। রবিঠাকুরের মধ্যে লুকিয়ে থাকার চিত্রকরকে ওকাম্পো বের করে এনেছিলেন এবং বিশেষ উদ্যোগী হয়ে চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন।

রবিঠাকুরকে নিয়ে তিনি প্রচুর লেখালেখিও করেছিলেন। যিনি রবিঠাকুরকে ভালোবেসেছিলেন তিনিই ’৭১ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষেও দাঁড়িয়েছিলেন। ৮১ বছর বয়সে তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার প্রতিবাদে মিছিল করেছিলেন, যার পুরোভাগে ছিলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো।

দুই অসমবয়সী মানুষের মধ্যে একটা চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যা প্রেমেরও ঊর্ধেŸ। দুজনই দুজনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। হয়তো তাই রবিঠাকুরের শেষজীবনের সৃষ্টি ‘শেষের কবিতা’র লাবণ্য ওকাম্পোকেই ধারণ করেছিল।

সারাজীবনে কিংবদন্তীর এই দুই ব্যক্তিত্বের দেখা হয়েছিল মাত্র দুবার। তারপরও তারা পরস্পরকে না-দেখেও কাছে ছিলেন, না ছুঁয়েও মনের কাছাকাছি ছিলেন। যতদিন রবীন্দ্রসাহিত্য মানুষের মনকে দোলা দেবে, ততদিনই তার বিজয়াও মানবমনে চির জাগরুক হয়ে থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close