সৈয়দ শাহনুর আহমদ

  ০৭ অক্টোবর, ২০২২

গল্প

প্রথম আলাপ

সৈয়দ সেলিম, বয়স আঠারো ছুঁইছুঁই করছে। সুঠাম শরীর, ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা, ভালো ক্রিকেট খেলে। প্রায় সব খেলায় পারদর্শী। পাড়াতে সেলিম ভাই বলে পরিচিত। মিষ্টি স্বভাবের জন্য বড়রা ওকে ভালোবাসে। ছোটদের কাছে সেলিম ভাইয়া। সবার প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সেলিমই ভরসা। তাই বলে ভাববেন না যে, ও শুধু এসবই করে বেড়ায়। পড়াশোনাতেও সবার থেকে এগিয়ে। প্রতি বছর সব ক্লাসেই প্রথম স্থান সেলিমের। ইন্টার পরীক্ষা সবে শেষ হলো, কি বাড়ি কি পাড়া- কেউই ওকে পরীক্ষা কেমন হলো জিজ্ঞেস করে না। সবাই জানে, সেলিমের রেজাল্ট খুবই ভালো হবে। বাবা-মার একমাত্র সন্তান। বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানির জিএম পদে চাকরি করেন, মা গৃহবধূ। তার কাজ শ্বশুরের ছোট্ট তিনতলা বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রাখা; নিপুণতার সঙ্গে সবার প্রতি সব কর্তবই তিনি পালন করে চলেছেন। সেলিমের বাবাও সুন্দর মনের মানুষ। সবার বিপদে-আপদে পাশে থাকেন। তাই তো ছেলেটিও বাপের আদলেই নিজেকে গড়ে তুলছে।

সেলিমদের ঠিক পাশেই একটি দোতলা বাড়ি অনেক দিন ধরেই তৈরি হয়ে পড়ে ছিল, কিন্তু বাড়িটিতে কেউ থাকে না। একজন মাত্র কেয়ারটেকার বাড়িটা পাহারা দেয়। অথচ চাইলে চমৎকার বাড়িটি ভাড়া দেওয়া যেত। তাও দেয়নি। সেলিমের বাবা সৈয়দ আলিম রোজকার মতো মর্নিংওয়ার্কে বেরিয়ে ছিলেন, ফেরার পথে গলির কাছে এসেই দেখতে পেলেন- একটা বড় ট্রাক রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। সে না পারছে এগোতে না পারছে পেছনে যেতে। কেননা সৈয়দ আলিম সাহেবের বাড়ির বাউন্ডারি ওয়ালের জন্য ট্রাকটা এগোতে পারছে না, আর পেছাতে না পারার কারণ সারিবদ্ধ গাড়ি। ঢাকা শহরে এই একটা ঝামেলা, বাড়ি করার সময় এক ইঞ্চি জায়গা কেউ ছাড়তে চায় না। অথচ এটা চিন্তা করে না। কখনো যদি নিজেরা বিপদে পড়ে তাদের গাড়িগুলো চলাচল করবে কেমন করে? এগুলো ভাবতে ভাবতেই ইকবাল সাহেব দেখতে পেলেন- একজন খুবই সৌম্য দর্শন ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন। কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনিই তো সৈয়দ আলিম।’ ‘হ্যাঁ, কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না, এ পাড়াতে আগে আপনাকে কখনো দেখিনি!’ ‘আমি ইকবাল চৌধুরী, থাকতাম চট্টগ্রামে, আপনার প্রতিবেশী হতে এলাম। তবে আপনি ঠিকই বলেছেন, আপনিও আমাকে আগে দেখেননি, আমিও আজ এইমাত্র দেখলাম।’ ‘তবে চিনলেন কী করে আমাকে’। ‘ওই আপনার পাড়ার একজন দূর থেকে আপনাকে দেখিয়ে দিলেন।’ ‘আপনার সঙ্গে আলাপ করে খুব ভালো লাগল, কিছু দরকার পড়লে নির্দ্বিধায়ে বলতে পারেন।’ ‘দরকার তো আছেই, তবে কীভাবে যে বলি আপনাকে।’ ‘আরে, অত সংকোচ করছেন কেন, বলে ফেলুন।’ ‘আপনি যদি আপনার বাউন্ডারি ওয়াল কিছুটা ভেঙে দেন তো ট্রাকটা ভেতরে ঢুকতে পারে, আর আমি কথা দিচ্ছি- আমি আবার আপনার ওয়াল ঠিক এ রকম করে বানিয়ে দেব।’ ‘আরে বাবা, এত কিন্তু কিন্তু করছেন কেন! আমি এখনই ওটা ভেঙে দিচ্ছি।’ ‘সৈয়দ সাহেব, আপনি আমাকে বাঁচালেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’ সৈয়দ আলিম সাহেব একটু হেসে এগিয়ে গেলেন নিজের বাড়ির দিকে, কাছে গিয়ে ডাকলেন। ‘সেলিম, বাবা একটু বেরিয়ে আয় না। ‘আসছি বাবা’ বলে সেলিম বেরিয়ে এলো।’ ‘বাবা আমাকে ডেকেছিলেন?’ ‘হ্যাঁ রে বাবা, একটা শাবল নিয়ে আয়, দেখ না উনার ট্রাক ঢুকছে না আমাদের এই প্রাচীরের জন্য, ওটাকে একটু ভাঙতে হবে।’ বাবার কথা শুনে সেলিম বলে- ‘আমি এখনই শাবল এনে ভেঙে দিচ্ছি।’ শাবল এলো, প্রাচীর ভাঙা হলো, ওদের ট্রাক ঢুকল, মালপত্র খালি করে ট্রাক বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত। সব কাজ শেষে সেলিম যখন নিজের বাড়ির ভেতর গেল, তখন বিকেল পাঁচটা। গোসল ও খাওয়া শেষে বিছানাতে গা এলিয়ে দিল আর অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে গেল। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ওর মা সৈয়দা কানিজ ডাকলেন- ‘সেলিম বাবা উঠে পড়, আর ঘুমাতে হবে না। দ্যাখ, আমাদের নতুন প্রতিবেশী এসেছে আলাপ করতে, তোর খোঁজ করছে।’ মায়ের ডাকে সেলিম উঠে পড়ল, সোজা বাথরুমে গিয়ে মুখণ্ডহাত ধুয়ে বসার ঘরে গিয়ে দেখে যে, ইকবাল চৌধুরী আর তার সঙ্গে আরো তিনজন, মনে হয় ওনার স্ত্রী আর দুই কন্যা। সেলিম যেতেই ইকবাল চৌধুরী, সৈয়দ আলিমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘সেলিম আপনার ছেলে তাই তো?’ সৈয়দ আলিম বললেন, ‘হ্যাঁ এই আমার ছেলে সৈয়দ সেলিম আর আমার স্ত্রী সৈয়দা কানিজ, একটু আগেই দেখলেন যাকে, আমার এই তিনজনের সংসার।’ ইকবাল চৌধুরী বললেন, ‘আলাপ করিয়ে দিই, ইনি পুষ্পা চৌধুরী আমার অর্ধাঙ্গিনী আর এরা আমার দুই মেয়ে- স্নিগ্ধা চৌধুরী আর পাপড়ি চৌধুরী। আমাদের এই চারজনের সংসার, চট্টগ্রামে ছিলাম এত দিন। এবার ঢাকায় পাঠাল বাকি তিন-চার বছর এখানেই থাকব, তারপর আমার অবসরের সময় হয়ে যাবে, তাই এই বাড়ি করা। এখানে পাকাপাকিভাবেই বসবাস করব।’ সেলিমের কানে প্রথমে কিছু কথা ঢুকলেও পরের কথাগুলো কিছুই আর কানে ঢোকেনি, কেননা ওর সামনে যে দুজন সুন্দরী মেয়ে বসে আছে, তাদের দিক থেকে ও চোখই সরাতে পাড়ছে না। ওদের দুজনেরই রূপ যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে, যেমন গায়ের রং, সে রকম তাদের মুখশ্রী। মুখের নিচেই বুকের দিকে তাকিয়ে সেলিম একটু ঢোক গিলল। পাতলা সাদা জামা দুজনেরই আর গাঢ় নীল রঙের স্কার্ট। এবার ওদের মার দিকে চোখ ফেরাল সেলিম। তিনিও ভীষণ সুন্দরী। সে কারণেই মেয়ে দুটি মায়ের চেহারা পেয়েছে। ইকবাল চৌধুরীর কথাতে সেলিমের হুশ ফিরল- ‘কি বাবা সেলিম, একদম চুপচাপ কেন? তুমি তো কিছুই বলছো না। স্নিগ্ধা আর পাপড়ির সঙ্গে আলাপ করে নাও, তোমরা তো এ যুগের ছেলেমেয়ে, এত সংকোচ করছো কেন?’ বাবার কথায় সায় দিয়ে স্নিগ্ধা বলল, ‘এত লজ্জা পেলে আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন কেমন করে?’ ‘না না লজ্জা নয়, একদম নতুন তো, তাই কীভাবে আলাপ করব ভাবছি।’ শুনে পাপড়ি বলল, ‘এতে এত ভাবাভাবির কি আছে, চলো আমাকে তোমাদের বাড়ি, তোমার ঘর সব দ্যাখাও।’ এগিয়ে এসে সেলিমের হাত ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে দিল। অগত্যা, সেলিমকে ওর সঙ্গে বাড়ি দেখাতে চলল। সব দেখে পাপড়ি বলল, ‘তোমার ঘর তো দেখালে না?’ সেলিম বলল, ‘আমার ঘর দেখে কী করবে, ঠিক আছে চলো’ বলে ওর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। সেলিমের মা রান্নাঘর থেকে চায়ের ট্রে নিয়ে আসছিলেন। সেলিমকে দেখে বললেন, কিরে চা খাবি তো?’ সেলিম কিছু বলার আগেই পাপড়ি বলে উঠল, ‘কাকিমা, আমরা একটু পরে চা খাব, তুমি ওদের সবাইকে দাও, আমরা এখুনি আসছি।’ আমার ঘরে ঢুকে পাপড়ি চারদিক দেখতে থাকল। আমার পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে সব বই ঘেঁটে ঘেঁটে দেখতে থাকল, বলল, ‘বাব্বা, তুমি তো অনেক বই পড়ো, তুমি কি একাদশ শ্রেণিতে উঠলে?’ শুনে সেলিম বলল, ‘না আমি এবার ইন্টার ফাইনাল দেব।’ পাপড়ি বলল, ‘ও আমি এবার ইন্টারে ভর্তি হব আমার রেজাল্ট বেরিয়ে গেছে।’ সেলিম এমনি কেসুয়ালি বলল, ‘আমার তো সব দেখলে, তোমারটা দেখাবে না?’ এ কথার অন্য মানে মনে করে পাপড়ি বলল, ‘তুমি তো খুব স্মার্ট, প্রথম আলাপেই তুমি আমার সবকিছু দেখতে চাইছো, আর দেখতে যখন চেয়েছো তো আমি নিশ্চয়ই দেখাব, দাঁড়াও’ বলে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিল। সেলিম বলল, ‘কী হলো, দরজা বন্ধ করলে কেন?’ ‘না করলে দেখাব কীভাবে, যদি কেউ এসে যায়।’ সেলিম কিছু বলার আগেই পাপড়ি সেলিমের গালে ঠোঁট জোড়া দিয়ে চুমু খেয়ে দৌড়ে বের হয়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close