আহমদ বশীর
অন্তর্বর্তী সময়
আমার স্বামী কী কয়- আমি বুঝি না, যুদ্ধ কী, কার লগে যুদ্ধ? যুদ্ধ কেন? আমারে বিয়া কইরা আনছে- অহন কীয়ের যুদ্ধ! আমরা তো অহন সংসার করুম! অহন কীয়ের যুদ্ধ! অস্ত্রপাতি। আল্লারে আবার মাথার মধ্যে তখন ঠাঠা পড়ছে। উনি কইলেন আমি মাগনা মাগনা তোমারে শাদি করি নাই। একটা উদ্দেশ্য আছে। কীয়ের উদ্দেশ্য? পরে সব কথা জানতে পারবা। অহন তোমার এত কথা জানার দরকার নাই। এ কথা জাইন্যা রাখো, তুমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। আমার পরথম স্ত্রীর ঘরে একটা ছেলে আছে। সে মাঝেমধ্যে আইবো, তারে খাওন-দাওন দিতে হইবো।
তুমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম জন কোথায়?
ক্যামনে কমু? আমি কী তার ঠিকানা জানি? আমার বাপের লগে কেমনে আমার স্বামীর প্রথম দেখা হইছে, তাও আমি জানি নাই।
তোমারে কোনো দিন বলে নাই?
না। আমার বাচ্চা হইবার পর এক দিন একটা ১৪-১৫ বছরের চ্যাংড়া ছেড়ারে আমার স্বামী ঘরে লইয়া আসে। পোলাডার একটু একটু দাড়ি হইছে, তো উনি আইসা পোলাডারে কইলেন, এ্যাইডা তোর নতুন মা, এরে পায়ে ধইরা সালাম কর। আমি বোরকা পিন্দা ছিলাম; তো দেখলাম, পোলাডার একদম অর বাপের ন্যাহাল। আমার স্বামী তারে খাওয়া দিতে কইলো। আমি ভাত-তরকারি বাইরা দিলাম। খাইয়া আমার স্বামী তার পোলাডারে আলমারি থেইক্যা অনেক ট্যাকা বাইর কইরা দিলো। ট্যাকাগুলান কয়েকটা খামে ভইরা ভাগ ভাগ কইরা ওর হাতে দিলো। তারপর আবার আমারে সালাম কইরা চইলা গেল। যাওনের টাইমে পোলাডার ব্যাগের মধ্যে কি একটা যন্ত্রও ঢুকাইয়া দিলো। বুঝলাম উনি তার পোলাডারেও তার মতো বানাইছে।
আর ছোট সাহেব? তার কথা তোমার স্বামী কীভাবে জানালো?
ছোট সাহেবরে আমার স্বামী নেতার মতো মানতো। আসলে ছোট সাহেবই নেতা আছিলো। আমার স্বামী অনেক দিন উনার কথা কইছে। বিয়ার দুই-এক মাসের মধ্যেই উনি প্রথমে আমাদের বাসায় আসেন। তখন আমরা এক বাসায় থাকতাম- মনে হয় এটা রাজশাহী বা অন্য কোনো জেলা হইবো। হেইদিন আমার স্বামী আমারে ভালো কইরা রাধতে কইলো। আর কইলো, আইজকা এক বুজর্গ আদমি আমাগো ঘরে আইবো। তার কাছে নাকি জীবনের ও পরকালের সব সত্যকথা জানা যায়। তো সেইদিন ছোট সাহেব আইস্যা...
কান্দো ক্যান? এই মেয়ে কান্দো ক্যান? এ্যাই স্টুপিড কান্দো ক্যান?
আপা, আমারে আর জিগায়েন না। আইজকা আমি কইতে পারুম না।
উহ্ এই মেয়েটা ছোট সাহেবের কথা বললেই বডডো ইমোশনাল হয়ে পড়ে। এ্যাই, এ্যাই আমার পায়ে ধরো না। উহু উহু, প্লিজ আমার পায়ে ধরো না। তুমি সত্যি কথা বলো, সত্যি কথা বলো, তাহলে তোমারই ভালো হবে।
আমি সত্য কথা কমু।
দ্যাখো, আবার বলছি, তোমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তোমার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। জীবনেও তুমি মুক্তি পাবা না। বলা যায় না হ্যাংগিংও হতে পারে।
আপা আমার কী দোষ? কন? আমার কী দোষ? আমারে ওই লোকটার লগে আমার বাবা বিয়া দিছে... আমি সেটাই তো ক্লু। তোমার বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তোমার দেওয়া ঠিকানা তো আমরা লোক পাঠিয়েছিলাম। ওই পোল্ডারের ওই বেড়িবাঁধে তোমার বাবা-মা নেই। কয়েক মাস আগেই উনারা ভাগছে।
আপা!
কাঁদছো! কাঁদছো। এ্যাই মেয়ে ফ্যা ফ্যা করে কেঁদোনা। একটু থামো দেখি আমার মোবাইলে কেউ কল দিয়েছে, কথা বলে দেখি।
বলেন আপা। মোবাইলে কথা বলেন।
হ্যালো। আসসালামু আলাইকুম। হ্যালো, জি স্যার বলেন। কী? ছোট সাহেবকে ধরা হয়েছে? কোথায় স্যার নোয়াখালী? ওহ সোনাপুর দিয়ে... সুবর্ণচর,... জি জি... চেয়ারম্যানঘাট হয়ে... বয়েরচর। ছোট সাহেবের মতো? আচ্ছা আচ্ছা... ওকে জিগ্যাসাবাদ করা যাবে। মেয়েটা তো আমার সামনে বসে আছে। হ্যাঁ ইন্টারোগেশন করছি। ঠিক আছে স্যার। কালকে নিয়ে আসেন। ওকে দিয়ে শনাক্ত করাবো, ওকে স্যার। আসসালামু আলাইকুম।
আপা কী কইলো মোবাইলে?
ওই যে তোমার ছোট সাহেবকে ধরা হয়েছে, আগামীকাল নিয়ে এলে তোমাকে প্রুফ করতে হবে, দেখি কী হয়।
স্যার ছোট সাহেবরে কেমনে ধরলো? হায় হায়।
ওই যে নোয়াখালীর সুবর্ণচর,... চেয়ারম্যানঘাট হয়ে... বয়েরচর... একটা চায়ের দোকানে লোকটা চা খাচ্ছিল।
চায়ের দোকানে বইস্যা বইস্যা ছোট সাহেব চা খায়? হি হি হি।
আরে তুমি এতো হাসছো ক্যান! কী হয়েছে তোমার? ছোট সাহেবের জন্য এখুনি তুমি কাঁদলে, এখন আবার হাসছো। মানে!
কিছু না। এমনি।
"