বই আলোচনা
অসহায় জীবনের গল্প
‘তুমি চাইলে অন্ধ আমি দু’চোখে পাই আলো/তুমি চাইলে সর্বহারা দুঃখেও থাকি ভালো।’ কিংবা ‘নিঃসঙ্গতার এই একটা খারাপ দিক, মাঝে মাঝে কিছুই ভালো লাগে না।’ এমন হৃদয়ছোঁয়া চরণগুলো খুঁজে পাবেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘এখানে কয়েকটি জীবন’ গল্পগ্রন্থে।
অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এ প্রকাশিত সালাহ উদ্দিন মাহমুদের চতুর্থ গল্পগ্রন্থ ‘এখানে কয়েকটি জীবন’ কতগুলো গল্পের সমাহার, যা প্রত্যেকের জীবনের গল্প। সবার হাসি-কান্নার গল্প। আশা-নিরাশার গল্প। অসহায় জীবনের গল্প। পুরো বইয়ের গল্পজুড়েই যেন জীবনের বিস্তার।
রাজিয়া-আনিস দম্পতির সন্তানের মুখ না দেখার আক্ষেপের গল্প। সোনাবউ ছাড়া অনন্তের বৈরাগ্য, নিঃসঙ্গতা, একাকী জীবনের গল্প। আজমের সাফল্যে বাবা-মায়ের হাসি-আনন্দের গল্প। রুবির বুকে সুজনের প্রতি লুকিয়ে থাকা অগাধ ভালোবাসার গল্প। ভালোবাসার নামে শরীর লোভী লম্পট প্রেমিকের গল্প। জয়শ্রীর আত্মহননের বেদনার গল্প, মিথিলার পাখির মতো স্বাধীনভাবে উড়তে চাওয়ার গল্পসহ এগারোটি গল্প সম্পর্কে জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
আমি এই প্রথম সালাহ উদ্দিন মাহমুদের বই পড়লাম। বইটির গল্পগুলো মন ছুঁয়েছে। এতে সাহিত্যের অতিরিক্ত মারপ্যাঁচ নেই। আবেগের আতিশয্য নেই। আমাদের চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই লেখক তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তুলে এনেছেন। গল্পগুলো যথাক্রমে- জীবন, সোনাবউ, শাড়ি, বিবস্ত্র, দায়ী, জয়শ্রী, কুমারী, নাকফুল, কুকুর, গোলেয়া ও মিঠু।
আমার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে তার ‘জীবন’ গল্পটি। এটি সন্তানহীন এক দম্পতির গল্প। তাদের সাত বছরের দাম্পত্য জীবনের আক্ষেপের গল্প। এক বসায় পড়ার মতো একটি বই ‘এখানে কয়েকটি জীবন’। বইয়ের দারুণ প্রচ্ছদ করেছেন প্রচ্ছদশিল্পী আইয়ুব আল আমিন। বইটি প্রকাশ করেছে কিংবদন্তি পাবলিকেশন।
সামান্য দু-একটি মুদ্রণজনিত ত্রুটি ছাড়া তেমন কোনো ভুল চোখে পড়েনি। বইটির বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করছি। আশা করি সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ভবিষ্যতে আরো চমৎকার গল্প আমাদের উপহার দেবেন।
* মো. আশরাফুল ইসলাম
"