সোহেল মাজহার

  ২০ মে, ২০২২

ধারাবাহিক রচনা- ৩০

উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু

অসাধারণ বক্তা তিনি। কোথাও বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালে তার চারপাশে দাঁড়িয়ে যায় হাজার, লাখো মানুষ। বাঙালিদের দীর্ঘদিনের নানা দাবিকে শেখ মুজিব চুম্বক আকারে ছয়টি দফায় পরিণত করে আন্দোলন করেন স্বায়ত্তশাসনের। তার কণ্ঠ রুদ্ধ করার জন্য তাকে জেলে পুরে দেয় পাকিস্তানি শাসক। কিন্তু জনগণের তীব্র দাবির মুখে তাকে ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয় আবার। দিকে দিকে স্লোগান ওঠে ‘জেলের তালা ভেঙেছি শেখ মুজিবকে এনেছি।’

লেখক পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পূর্ব বাংলার সময়ের স্বাভাবিক প্রবণতা চিহ্নিত করেন। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন শুধু তাহের পোষণ করতে তা নয়। আরো অনেকের মনে সেই অগ্নি যন্ত্রণা ছিল। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন মহকুমা শহর জামালপুরে ইস্ট বেঙ্গল লিবারেশন পার্টি গঠিত হয়। মূল নেতৃত্বে ছিলেন আলী আসাদ। আর এম সায়ীদ ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। একই সঙ্গে লে. মোয়াজ্জেম হোসেনও সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য অনেক দূর অগ্রসর হয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। লেখক তার আখ্যানে এ রকম আরো গোপন প্রয়াসের কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের মনে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা সৃষ্টিতে এসব ছোট ও বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের ভূমিকা নেহাত কম নয়। লেখকের ভাষায়- ‘বিচ্ছিন্নভাবে এ অঞ্চলে কেউ কেউ সেসময় এ সম্ভাবনার কথা ভাবছেন অবশ্য। ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখরা মিলে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে একটা নিউক্লিয়াস গড়ে তুলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে একটা জঙ্গিরূপ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার সম্ভাবনার কথা ভাবছেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে তাহেরের যোগাযোগ হয়নি। ফলে এক রকম নিঃসঙ্গভাবেই নিজেকে তখন প্রস্তুত করছেন তিনি। প্রস্তুত হচ্ছেন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধের জন্য, যে যুদ্ধ একই সঙ্গে হবে স্বাধীনতার এবং সমাজতন্ত্রের জন্য। ঠিক যেমন হচ্ছে ভিয়েতনামে। যেমন হো চি মিন গেরিলা যুদ্ধ করছেন সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা থেকে ভিয়েতনামকে মুক্ত করে সেখানে একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র কায়েমের জন্য। প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে তাই নিজের পরিবারের মধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন গেরিলা ট্রেনিং।’

কাজেই কর্নেল আবু তাহের বাঙালির মুক্তির জন্য কেবল নিজের মনকে প্রস্তুত করেননি, নিজের পরিবারকে যুক্ত করেছেন, সীমিত পরিসরে হলেও সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরুঙ্কুশ বিজয় অর্জন, পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র, ২ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা, ষড়যন্ত্রের কথা লেখক আলোচনা করেন। স্বাভাবিকভাবে তাহের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত থাকলেও পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। মূলত ৬৬ থেকে ৭১ মূলত শেখ মুজিবুর রহমানই বাঙালির রাজনীতিক দৃষ্টিভঙ্গির মূল নির্দেশক হয়ে ওঠেন। লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও তার ঐতিহাসিক ভূমিকা চিহ্নিত করেন এভাবে-

ক. ‘দৃশ্যপটের প্রধান চরিত্র তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। গাড়ির ড্রাইভিং সিট এখন তার দখলে। তার ওপর নির্ভর করছে গাড়ি চলবে কোন দিগন্তে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close