সোহেল মাজহার

  ১৩ মে, ২০২২

ধারাবাহিক রচনা- ২৯

উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু

শাহাদুজ্জামানের ক্রাচের কর্নেল (২০০৯) : শাহাদুজ্জামান তার আশ্চর্য কথনভঙ্গি ব্যবহার করে ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র বাস্তবভিত্তিক ঘটনাসূত্রের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহের বীর-উত্তমের জীবন আখ্যানকে সাহিত্য ভাষ্যে প্রকাশ করেছেন। ভাষা, আবেগ, আশ্চর্য রকম ভঙ্গিতে তাহেরের গল্প বলার আড়ালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অনিবার্য বাস্তবতা ব্যক্ত করেছেন। চিহ্নিত করেছেন সমাজ, ইতিহাস, ভাষা-সংস্কৃতি, রাজনৈতিক দৃঢ় প্রতিজ্ঞার অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি, লড়াই সংগ্রামের অনিঃশেষ চেতনা। লেখক মানসিকভাবে একজন সাইকিয়াট্রির কথা উল্লেখ করেছেন। যিনি অন্তর্মুখী ও কবিতা লেখেন। সেই কবিতার মাঝে খুব শীতল মৃত্যুর আবহ এবং তীব্র মৃত্যুর ইমেজে আক্রান্ত। আবার আত্মহত্যার ইচ্ছা রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্নায়ুতে প্রবাহিত হতে থাকে। সেই স্নায়ু প্রবাহের অন্তর্ভেদী, মর্মভেদী রহস্য উন্মোচন করতে থাকলে পাঠক ঘোরগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পাঠকের কাছে ক্রমে ক্রমে উন্মোচিত হয় স্বপ্নতাড়িত একজন মানুষ একজন সৈনিকের জীবনের ব্রত।

লেখক শুধু তাহেরের গল্প বলেছেন তা কিন্তু নয়। ৪৭ সালের ভারত ভাগ প্রসঙ্গ জিন্নাহর গভর্নর জেনারেল পদমর্যাদার লোভ, বাংলা ভাগ লেখক চিহ্নিত করেছেন। রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গ, বাঙালিদের অবজ্ঞা করা, আইয়ুবের সামরিক শাসন-শোষণ ও নির্যাতন এবং অবজ্ঞা লেখক চিহ্নিত করেন। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলার রাজনীতি সাংস্কৃতিক বিকাশকে লেখক অসামান্য দক্ষতায় ব্যক্ত করেন। একটি দেশের সামগ্রিক রাজনীতি ও সমাজবাস্তবতা এত নির্মোহভাবে মূর্ত করতে সত্যিকার অর্থে অতুলনীয় ভাষা-পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। লেখক সেই সামর্থ্যরে পরিচয় দিয়েছেন। লেখকের ভাষায়- ‘বাঙালির সুট-টাই পরা ব্যারিস্টার নেতা নেই, নেই ইউনিফর্ম পরা জেনারেলও। তারা দাঁড়িয়েছে সিরাজগঞ্জের দরিদ্র কৃষকের মাদরাসায় পড়া সন্তান মওলানা ভাসানীর পেছনে। দিনের পর দিন ধরে কী করে বেড়ে চলেছে পশ্চিম পাকিস্তানের জৌলুশ আর পূর্ব পাকিস্তান হচ্ছে শ্মশান, জাদুকরী বৃত্ততায় সারা দেশে ঘুরে সে ইতিবৃত্ত সবাইকে শোনান শেখ মুজিব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close