বকুল আক্তার

  ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

জন্মদিন : সবুজ আহমেদ

শৈল্পিক শব্দের কবি

চিন্তা এবং অনুভূতিকে দ্বিধাহীনভাবে প্রকাশ করা যখন মূল লক্ষ্য হয়ে যায়, তখন পৃথিবীর তাবৎ কবি হয়ে যান এক ঘরের বাসিন্দা। মেধা ও উপস্থাপনার ভিত্তিতে একেকজন কবি নিজেদের আলাদা করে নেন। নানা সময়ে নানান আঙ্গিক থেকে গড়ে ওঠা শিল্প আন্দোলনগুলো আমাদের কয়েক রকম প্রকরণশৈলীতে পুরস্কৃত করে, উপহার দেয়। কবি সবুজ আহমেদ সেসব প্রকরণশৈলী ভালো করে রপ্ত করেছেন এ কথা অকপটে স্বীকার করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি তার কাব্যগ্রন্থ ‘হৃদয় পোড়া জোনাকির ক্ষীণ আলো’র প্রাককথনে বলেছেন- ‘আমি স্বপ্নবাজ, একটু ডানপিটে ছিলাম।’ তার লেখা পড়ে অনুধাবন করতে পারি, তিনি বড্ড জেদি, সাহসী এবং ধৈর্যশীল। তিনি যে একরোখা তার ছোট্ট একটা নজির?

যৌবনের দোরগোড়ায় না পৌঁছাতেই এক দিন এক মেয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তার সহপাঠীকে বলেছিল, ‘ঘরের পিছে কবি!’ এ কথা তাকে বড্ড তাড়িয়ে বেড়াত। এমন আরো কটাক্ষকে দুপায় মাড়িয়ে, তরতর করে সাফল্যের শিখরে আরোহণ করছেন। তারুণ্যে পৌঁছানোর আগে থেকেই লিখতেন। যখনই পাকাপোক্তভাবে যৌবনদীপ্ত সবুজ গালিচায় পা ফেলে চলতে লাগলেন, তখন থেকেই নিজেকে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার নেশায় মেতে উঠলেন। কাঁঠালের আঠার মতো লেগে রইলেন কাব্য সাধনায় এবং পত্রিকাওয়ালাদের পেছনে। শিক্ষাজীবনেই কলেজের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে পত্রিকায় লেখা পাঠাতেন।

স্বপ্নবাজ এই কবির প্রথম লেখা ছাপা হয় ইনকিলাব পত্রিকায়। সবুজ আহমেদ ধৈর্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে। প্রতীক্ষার প্রহর খুব বেদনাদায়ক হয় এটা একজন ভুক্তভোগীই বোঝেন। এ ক্ষেত্রে তার প্রতীক্ষার পালা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন নিয়মিত তার লেখা ছাপা হয় পত্রিকাগুলোতে। কিন্তু আগেকার সেই উচ্ছ্বাস নেই। কবি বলেন, ‘আগের লেখা আর এখনকার লেখায় বিস্তর ফারাক।’

তখনকার লেখার সঙ্গে এখনকার লেখায় মিল খুঁজে পান না তিনি। তখনকার লেখার চেয়ে এখনকার লেখা প্রশংসার দাবি রাখে এবং তার লেখা পাঠকের মনে টোকা দিয়ে যায়, মনে দাগ কাটে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি নিজেকে কাব্য সাধকের আসনে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।

সবুজ আহমেদ বরাবরই তার কবিতায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে কলমের আশ্রয় নিয়েছেন পোক্তভাবে, তার কবিতায় সবার আগে তিনি ধর্ম এবং দেশকে ভালোবেসেছেন। তারপর মজলুমের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, কবিতায় তুলে ধরেছেন, রোমান্টিকতা, প্রেম ও বিরহ, স্বীয় জন্মভূমির সবুজ বন-বনানীর নানান দৃশ্যপট। তিনি লেখেন এক অন্তর্গত তাড়না থেকে। হৃদয়ের গহিনে তিনি যে তাড়না বোধ করেন, তার শুদ্ধতম প্রকাশ ঘটানোর জন্যই তিনি কবিতা লেখেন।

কবি সবুজ আহমেদ ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব শিলুয়া গ্রামের লতু পাটোয়ারী বাড়িতে ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব, কিশোর আর যৌবনের দিনগুলো কেটেছে ফেনী চৌহদ্দির মধ্যেই। লেখালেখি তার কাছে শখ, সাধনা-আহ্লাদের বিষয়। পরিবারের অভাব ঘুচাতে তিনি সুদূর পরবাস সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সততা তার বড় পুঁজি আর সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি। তার পরও সবুজ আহমেদের বাক্যোচ্চরণে বেরিয়ে আসে নিরেট সত্যি, ন্যায় নৈতিকতা, মেধাভিত্তিক বাক্যালাপ, দয়াদাক্ষিণ্য পরিলক্ষিত হতে দেখি। গ্রামের দুস্থ মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘পিতা ফাউন্ডেশন’। এ কল্যাণ তহবিল থেকে তিনি এলাকার কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারসহ দুস্থদের সেবা করে যাচ্ছেন। যোগ্য মানুষের মূল্যায়ন করতেও দেখি এই কবিকে। সবুজ আহমেদের সহধর্মিণী জান্নাতুল ফেরদৌস। কবির সংসারে আলো হয়ে এসেছে এহসান হোসেন শিশির ও ইমাদ হোসেন শায়ান।

সবুজ আহমেদের ৩৯তম জন্মদিনে রইল দোয়া। তিনি দীর্ঘজীবী হোন। কবিতার শ্রমে ওম দিয়ে পাঠকপ্রাণ জয় করে কবি এভাবে এগিয়ে যাক অসীমের পানে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close