বদরুল আলম মজুমদার

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

শিক্ষার্থীরা গড়ছেন নতুন দল সন্দেহ-সংশয় বিএনপিতে

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে ছাত্রদের অগ্রগামী অংশের নেতারা চলতি মাসে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছে। সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জোটের নতুন দল মাঠে আসবে। ছাত্রদের নতুন দল নিয়ে বিএনপিতে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা দলটিকে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় কিংস পার্টি হিসেবে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ সরগরম আছে। কিংস পার্টি গঠনের কথাকে আমলে নিয়ে সরকারের একজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করে দলটির নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে এরই মধ্যে জানা গেছে। সরকারের ছত্রছায়ায় কোনো দল গঠন হলে বিএনপির জন্য তা দুশ্চিন্তর কারণ হতে পারে। বিএনপি নেতারা বিষয়টি স্বীকার না করলেও ছাত্রদের নতুন দল নিয়ে তারা আছে সন্দেহ ও সংশয়ের মধ্যে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে এসব বিষয়ে জানা গেছে।

ছাত্রদের নতুন দল নিয়ে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমদিকে ছাত্রদের দল গঠন নিয়ে বিএনপি তেমন কোনো আগ্রহ বা ভয়ের কারণ দেখচ্ছেন না। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রশ্নে জামায়াত ও ছাত্র জোটের একক অবস্থানের কারণে সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়ছে বিএনপিতে। বিশেষ করে কিছু ইসলামী দলের বিএনপিবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে নতুন দলের অবস্থান যদি সমপর্যায়ে চলে যায়, তাহলে বিএনপির জন্য সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হবে। যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।

নেতারা মনে করছেন, ৫ আগস্টের পর পর মাঠপর্যায় এবং প্রশাসনে বিএনপি ক্ষমতার প্রভাব ভোগ করলেও দিনে দিনে তা কমে আসছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে যদি আরো দেরি হয় তাহলে বিএনপিকে রীতিমতো বিরোধী দলের পর্যায়ে চলে যেতে হতে পারে। এছাড়া বিএনপির বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির যে সংঘবদ্ধ প্রচার-প্রচারণা মাঠে আছে নতুন দল মাঠে আসলে তা আরো বাড়বে। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে দলটিকে বহুমুখী প্রচার বা অপপ্রচারের সম্মুখীন হতে হবে। যেটি মোকাবিলা করা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নতুন দল গঠনকে বিএনপি ভয় পাচ্ছে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ সরকার হিসেবে সামনে নির্বাচন আয়োজন করবে। এখন কেউ ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করলে সেটি আর নিরপেক্ষ থাকবে না। এজন্যই ক্ষমতায় থেকে দল গঠন বা নির্বাচনের পক্ষে আমরা নই। তাছাড়া নতুন দলটি নির্বাচন প্রশ্নে কালক্ষেপণের রাজনীতি করতে পারে। যা এ মুহূর্তে দেশের মানুষ চায় না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, বিএনপি ভয় বা উদ্বেগের কথা স্বীকার না করলেও ভোট ব্যাংকের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বিএনপি কিছুটা চিন্তিত হতেই পারে। ছাত্ররা যেই লক্ষ্য নিয়ে এখন কাজ করছে তাহলো-প্রো-ইসলামিক, ভারতবিরোধী ও আওয়ামী লীগবিরোধী সেন্টিমেন্ট। বিএনপি ও জামায়াতের ভোট ব্যাংকটাও সেখানে। বিএনপি ভাবতে পারে যে ছাত্রদের দল হলে সেটি তাদের ভোট ব্যাংকে প্রভাব ফেলার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে। বড় দল হিসেবে বিএনপি এমন সব রাজনৈতিক উত্থান-পতন বিভিন্ন সময় দেখেছে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশে কিংস পার্টি কিংবা বিএনপি ভেঙে সংস্কারপন্থিরা কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা করেও অতীতে সফল হয়নি। তিনি আরো বলেন, সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে তাদের উদ্বেগের কিছু নেই। তবে বিএনপি মনে করতে পারে উপদেষ্টারা কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠরা বা অনুসারীরা নির্বাচনের মাঠে সরকারের সমর্থন পেতে পারে। তাই নির্বাচনে নিরপেক্ষতার অভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ছাত্ররা তারা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এ সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে, (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবেন, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।’

মির্জা ফখরুলের বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সরকারে থেকে কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সরকার থেকে বেরিয়ে আসব। দল গঠনের প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাইলে সরকার ছেড়ে দেব।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নতুন দল গঠন নিয়ে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই কারণ তাদের বিশ্বাস নতুন দল জনমনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

বরং তাদের উদ্বেগের একমাত্র জায়গা হলো- নির্বাচনকালীন ড. ইউনূসের সরকার কি আচরণ করে সেটি নিয়ে। তবে নির্বাচন প্রশ্নে ছাত্রদের নতুন দলটির অবস্থান বিএনপির বিপক্ষে হতে পারে। এটিই বিএনপির জন্য বড় অস্বস্তির কারণ।

ছাত্রনেতারা সরকারি পদ ছেড়ে রাজনীতি করার ঘোষণা দেওয়ার পরও বিএনপির অস্বস্তির জায়গাটা পরিষ্কার হচ্ছে না। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ বিষয়ে বলেন, ছাত্র উপদেষ্টারা পদ ছেড়ে দল বা নির্বাচন করলে বিএনপির আপত্তি থাকবে না।

তারা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু বিএনপি বড় দল। তাই সব বিষয়ে কথা হয়ত বলছি না। তবে এটা নৈতিকতার বিষয়। ক্ষমতায় থেকে দল করা কিংবা নির্বাচন করার চিন্তা করা অনৈতিক। দেশের মানুষ তা গ্রহণ করবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close