জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও
আ.লীগ নেতাকে ফিল্মি স্টাইলে আটক, পরে মুক্তি জানেন না ওসি
ঠাকুরগাঁও পৌর আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক মাহফুজার রহমান রিপনকে ফিল্মি স্টাইলে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। থানায় নিয়ে যাওয়ার প্রায় আট ঘণ্টা পর আবার তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। সিসিটিভি ক্যামেরায় সবকিছু দেখা গেছে। কেন তাকে ধরা হলো, আর কেনই-বা তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো, এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে নেটিজনদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুর রহমানের পাশের রুমে আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখলেও তিনি যদি না জানেন, তবে জানবে টা কে?
পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, যদি কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়, আবার ঘটনাটি অস্বীকার করা হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, গত বুধবার দুপুর ১২টা ৩ মিনিটে শহরের বাস টার্মিনাল সড়কের পাশে অবস্থিত নিশু ট্রেডাসের স্বত্বাধিকারী ও পৌর আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক মাহফুজার রহমান রিপনকে দুজন একটি মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ নেতা রিপনকে মোটরসাইকেলে তুলে নেন সদর থানার এএসআই খাদেমুল ইসলাম ও অপর এক কনস্টেবল।
জানা গেছে, মাহফুজার রহমান রিপনকে নিয়ে যাওয়ার পথে তার পকেটে থাকা ১৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এএসআই খাদেমুল ইসলাম। সঙ্গে থাকা মুঠোফোনটি কেড়ে নেন তিনি। থানায় নেওয়ার পর প্রায় আট ঘণ্টা রিপনকে ওসির পাশের রুমে আটকে রাখা হয়। আটকের পর চলে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে দর কষাকষি। সন্ধ্যার পরে আবার তাকে থানা থেকে ছেড়েও দেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে মাহফুজার রহমান রিপন জানান, তাকে নিয়ে যাওয়ার পরে একটি ছোট রুমে রাখা হয়। তার মুঠোফোনটি নিয়ে নেয় পুলিশ। মুঠোফোন থেকে কিছু ছবি বের করে তাকে আওয়ামী লীগের অর্থ জোগান দাতা বলে অভিযোগ করা হয়। পরে তাকে বিস্ফোরক আইনে মামলা দেওয়ার কথা কয়েক দফায় বলা হয়। পরে সন্ধ্যার আগে বিভিন্ন মাধ্যমে তদবির করে থানা থেকে বের হয়ে আসেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা রিপন আট ঘণ্টার অধিক সময় ধরে থানায় আটক করে রাখা হলেও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে সাংবাদিকদের জানায় পুলিশ। তাদের ভাষ্য, এই নামে কাউকে থানায় নিয়ে আসা হয়নি। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এএসআই খাদেমুল ইসলাম জানান, তিনি কাউকে তুলে নিয়ে যাননি এবং রিপন নামে কাউকে চিনেন না।
তবে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি শহীদুর রহমান বলেন, আমি সারা দিন থানায় ছিলাম না। কাউকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু কেউ যদি নিয়ে এসে ছেড়ে দেয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, এ ঘটনায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ লিখছেন, এমন পুলিশ সদর থানায় কখনো আসেনি। পুলিশের কথা ও আচরণে বোঝা যাচ্ছে তারা আওয়ামী লীগের এজেন্ট।
সংবাদকর্মী ফরিদুল ইসলাম রাঞ্জু লিখেন, ‘সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে রেখেও অবশেষে দেখা করেননি। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরও এই অবস্থা। তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে যাবে? এদিকে পুলিশ ধরা-ছাড়ায় ব্যস্ত।
অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক শাওন আমীন লিখেন, ঠাকুরগাঁও সালন্দর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা বিশ্বনাথকে (বিশ্ব মেম্বার) পুলিশ গভীর রাতে ধরে নিয়ে গেলে ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি গোলাম মাওলা চৌধুরী তাকে ছাড়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে দেন-দরবার করে। শোনা যায় ৪ লাখ টাকায় বিশ্বকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
তিনি আরেক পোস্টে লিখেন, মফিজুল মেম্বারের সঙ্গে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় ঠাকুরগাঁও সদর থানার এসআই শফিকুল বাদী হয়ে বিএনপি কর্মী মতিউরকে চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে হামলার ঘটনায় মিথ্যা মামলায় আসামি করে। আরেক সংবাদকর্মী কামরুল হাসান লিখেন, ঠাকুরগাঁও সদর থানার পুলিশকে নিয়ে এত বিতর্ক কেন?
প্রতিদিনের ঠাকুরগাঁও নামে একটি পেজ থেকে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, ঠাকুরগাঁও পৌর আওয়ামী লীগ নেতা রিপনকে সকালে তুলে নিয়ে গিয়ে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয় সদর থানা পুলিশ। ওসি বলেন, আমি কিছু জানি না। জানেটা কে? ‘সদর থানার ওসি গভীর রাতে বিদেশি মদের বোতলসহ তিন যুব মহিলা লীগের নেত্রীকে আটকের পরদিন ছেড়ে দেয়। কীভাবে সম্ভব? থানায় কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে ওসিকে পাওয়া যায় না। ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেন না। এমনকি পুলিশ সুপারকে ফোনে পাওয়া যায় না। তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাব। কার কাছে যাব?’
"