নাটোর প্রতিনিধি
লাভবান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সচল গ্রামীণ অর্থনীতি
নাটোরে গ্রামীণ মেলায় মুখরোচক খাবার-প্রসাধনীর জমজমাট বিক্রি
বই, পোস্টার, প্রসাধনী, লোহা ও কাঠের আসবাবপত্র। সব উঠেছে মেলায়। দোকানে থরে থরে সাজানো মিষ্টান্নসহ নানান খাবার। মেলার মাঠে দাঁড়িয়ে জিলাপি খাচ্ছেন কেউ কেউ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মা-বাবার হাত ধরে মেলায় এসেছে। তারা মা-বাবাকে নিয়ে খেলনার দোকানে যাচ্ছে। শীতের শুরুতেই নাটোরে জমজমাট হয়েছে উঠে গ্রামীণ মেলা। ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনকে উপলক্ষ করে গ্রামীণ জনপদে মেলার আয়োজন যেন থাকতেই হবে। দেশীয় সব মুখোরোচক খাবার আর হরেক রকম প্রসাধনীর পসরা নিয়েই মূলত গ্রামীণ মেলার আয়োজন। একদিন বা অল্প ক’দিনের এসব গ্রামীণ মেলায় ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে লাভবান হচ্ছেন অসংখ্য ব্যবসায়ী।
শীতের মৌসুমে মসজিদ এবং মাদ্রাসাভিত্তিক ওয়াজ মাহফিলে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামীণ জনপদ। শহরেও কমবেশি আয়োজন করা হয় এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। মাজারভিত্তিক ওরশ মাহফিলও আয়োজিত হতে দেখা যাচ্ছে। দোলযাত্রা, কালীপূজা, চড়ক পূজাও পায় উৎসবের আমেজ। ধর্মীয় এসব অনুষ্ঠান ছাড়াও বইমেলা, নৌকাবাইচ, ঘোড়দৌড় বা অন্য কোনো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা যেন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।
সিংড়া উপজেলার প্রসিদ্ধ বড়সাঁঐল কাশফুল উলুম মাদ্রাসায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আয়োজন করা হয় ওয়াজ মাহফিল। এ উপলক্ষে গত বুধবার থেকেই বিটিবিএম ফুটবল মাঠ এবং বড়সাঁঐল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। শতাধিক ব্যবসায়ী আর তাদের ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেছে এ দু’টি মাঠ। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, অন্তত দশ লাখ টাকার পণ্য কেনাবেচা হবে দুদিনের এ মেলায়।
পঞ্চাশের অধিক খাবারের দোকান বসানো হয়েছে। বই, পোস্টার, প্রসাধনী, লোহা ও কাঠের কিছু সামগ্রীর দোকানও বসানো হয়েছে। অনেকগুলো চটপটি-ফুচকার দোকানের মধ্যে ভ্যানে পণ্য সাজিয়ে দোকান করেন কালিগঞ্জ বাজার এলাকার প্রায় ৩০ বছরের ব্যবসায়ী রুবেল। রুবেল জানান, মেলার প্রথমদিনে গত বুধবার বিক্রি হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। আজ (গত বৃহস্পতিবার) একটু বেশি বিক্রির প্রত্যাশা। মেলায় অন্তত পাঁচমণ আলুর চিপস বিক্রির প্রত্যাশা রজব আলীর।
বিটিবিএম কলেজের শিক্ষকদের দেখা গেল কলেজ প্রাঙ্গণে বসে সবাই মিলে জিলাপী খেতে। কম্পিউটার অপারেশন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আবদুস শামীম বলেন, মেলার জিলাপীর স্বাদই আলাদা, অনেক সুস্বাদু। পেঁয়াজু, ছোলা, চিড়া ভাজা, ডালভাজা, চানাচুরসহ ১২টি খাবারসামগ্রীর দোকান দেন সিংড়া দমদমা এলাকার জহুরুল ইসলাম। পণ্য বিপণনে সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি। সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রসাধনী ব্যবসায়ী রিপন ও নাজমুল। কলমবাজারের ব্যবসায়ী রিপনের প্রসাধনীর দোকান আছে। মেলার খোঁজ পেলেই অংশ নেন বলে জানান তিনি। মেলা চলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে আষাঢ় পর্যন্ত। জহুরুল ইসলাম বছরে ৫০টি মেলায় অংশগ্রহণ করেন বলে জানান।
বিটিবিএম কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একসঙ্গে অনেক ক্রেতা ও অধিক মুনাফার কারণে মেলায় আসেন। ওয়াজ মাহফিল এলাকার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়ভাবে বসবাসকারী ছাড়াও বাইরে অবস্থানকারী গ্রামের বাসিন্দা এবং বাইরে বিয়ে হওয়া গ্রামের মেয়েরা তাদের পরিবারসহ মাহফিলে আসেন ও মেলায় কেনাকাটা করেন বলে জানান বড়সাঁঐল কাশফুল উলুম মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মুস্তাফিজুর রহমান খোকন। নাটোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মান্নাফ বলেন, গ্রামীণ মেলা আমাদের ঐতিহ্য। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এর অনন্য ভূমিকা রয়েছে।
"