নিজস্ব প্রতিবেদক
ঐক্য বিনষ্ট করার সুযোগ দেওয়া যাবে না
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
বাংলাদেশকে এখন যে নানা মাত্রিক দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে, সেজন্য সবার আগে বৈচিত্র্যের ঐক্য প্রয়োজন। দেশের সব ধর্মের, সব জাতির, সব ধরনের শ্রেণি-পেশা-সংস্কৃতির মানুষের ঐক্যই পারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। তাই দেশের মানুষের ঐক্য বিনষ্ট করার সুযোগ দেওয়া যাবে না বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয়।
সম্প্রতি সম্মিলিত সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণকে পতাকা অবমাননার মামলায় গ্রেপ্তার করে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, তা অবাঞ্ছিত বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। এতে বলা হয়, সরকারের এই অপরিণামদর্শিতার কারণেই অযথা চট্টগ্রামের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নিহত হতে হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র ধিক্কার জানিয়ে অনতি বিলম্বে উপযুক্ত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের বের করে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। একই সঙ্গে গত তিন মাসে ঘটা মাজারে হামলা, হিন্দুদের ওপর হামলা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপর হামলা, শ্রমিকের ওপর গুলি চালানো, নারীদের ?ওপর হামলার কঠোর বিচার নিশ্চিত করা এবং সব ধরনের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ, নারীবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ, ঘৃণার চাষের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যার পরে যেভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিল দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তকারী মহল, সেটি প্রতিহত করতে যেভাবে দেশের সব পর্যায়ের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, দলমত-নির্বিশেষে এগিয়ে এসেছেন, সেজন্য গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি দেশবাসীকে অভিনন্দন জানায়। বাংলাদেশের জনগণ আবারও কারো ফাঁদে পাড়া না দিয়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটা উদাহরণ তৈরি করেছেন।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে, বাংলাদেশকে এখন যে নানা মাত্রিক দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে, তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন এই বৈচিত্র্যের ঐক্য। দেশের সব ধর্মের, সব জাতির, সব লিঙ্গের, সব ধরনের শ্রেণি-পেশা-সংস্কৃতির মানুষের মধ্যকার ঐক্যই পারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু সরকারের কেউ কেউসহ কয়েকটি মহল এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘এ কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, গণঅভ্যুত্থানের পরে গত তিন মাসে একের পর এক মাজারে হামলা হলো, প্রোপাগান্ডা বাদ দিলেও হিন্দুদের বাড়িঘরেও হামলা হলো, শ্রমিকের ওপর গুলি চলল, ক্ষুদ্র জাতিগেষ্ঠীর মানুষের ওপর হামলা হলো, রিকশাওয়ালাদের ভিলেন (খলনায়ক) বানানোর চেষ্টা চলল, নারীবিদ্বেষী প্রোপাগান্ডা চলল, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী কাজকর্ম চলল, বাজারে সিন্ডিকেটবাজি চলল কিন্তু এই সবকিছুতেই সরকারের ভূমিকা আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় নিষ্ক্রিয় এবং অকার্যকর থাকল।’
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে, যেকোনো গণতান্ত্রিক দাবির আন্দোলনকেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের কাজ বলে ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা, গণঅভ্যুত্থানকারী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিকারী বক্তব্য প্রদান বা দায়িত্বজ্ঞানহীন মতামত প্রকাশ, সর্বোপরি পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম ব্যর্থতা এ সবকিছুই নানা রকম বিভাজনকে উসকে দিয়ে পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে তুলছে, যার সুযোগ নেওয়ার জন্য পতিত স্বৈরাচার এবং দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা বসে আছে।
পতাকা অবমাননার মতো বিভ্রান্তিমূলক মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করাটা সরকারের জন্য সুবিবেচনার কাজ হয়নি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনতিবিলম্বে চিন্ময়কে জামিন দেওয়া হোক। চিন্ময়ের বিরুদ্ধে যদি দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হওয়ার কোনো তথ্য প্রমাণ সরকারের কাছে থাকে, তাহলে সেটা প্রকাশ করা হোক।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে, গণঅভ্যুত্থানকে টিকিয়ে রাখতে হলে কোনো ধর্মের নামেই কোনো প্রকার ফ্যাসিবাদী চর্চাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। এ দেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- কোনো ধর্মের সাধারণ দেশপ্রেমিক মানুষই এসব ধর্মের নামে ফ্যাসিবাদী সংগঠনের তৎপরতাকে সুনজরে দেখেন না।
উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২২ আগস্ট গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ সমাজের নানা পেশার শতাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত হয় এই কমিটি।
"