নিজস্ব প্রতিবেদক
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিয়ে আলোচনা
ঢাকা-ব্রাসেলস বৈঠক
জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নের শিকার ও বেঁচে যাওয়াদের প্রতি সম্মান জানানোর পাশাপাশি পতিত শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার বিচার নিয়ে আলোচনা করেছে ঢাকা ও ব্রাসেলস। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনি কাঠামোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। গত সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।
যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি বলে বৈঠকে দুই পক্ষই একমত হয়েছে। এ সময়ে সব পর্যায়ে যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে ইইউ। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনি কাঠামোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এ আইনটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। বৈঠকে বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, নিরাপত্তা খাত এবং আইন ও সংসদে সক্ষমতা তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়। নারী, শিশু এবং সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে ইইউ। এ বিষয়টি নজরে আনা প্রয়োজন বলে বৈঠকে একমত হয়েছে ঢাকা ও ব্রাসেলস।
বৈঠকে ইইউতে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বৈধ কাজের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আরো জনশক্তি নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে- এরকম ১০টি খাতের কথা উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে ইইউ-বাংলাদেশ যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী। ইইউর পক্ষে নেতৃত্ব দেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি।
বৈঠকে মানবাধিকার, সুশাসন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইইউ। বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে, তাতে মানবাধিকার ও সুশাসন উন্নত করার এ বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক, বহুত্ববাদী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের দিকে সংস্কারের অগ্রগতি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে বৈঠকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ। গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্তে সরকার যে কমিশন করেছে, তা গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলেও বৈঠকে অভিমত দিয়েছে সংস্থাটি। সেই সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো কিছু আইন, যা বিরোধীমত দমন এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে খর্ব করত, সেগুলোকে সংস্কারের উদ্যোগ এ প্রতিশ্রুতির আভাস দেয়।
ইইউ জানায়, কেউ যাতে সহিংসতা, হয়রানি বা বৈষম্যের শিকারের ভয়ে বসবাস না করে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইইউভুক্ত দেশগুলোয় বৈধ পথে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর জন্য একটি পথনকশা তৈরি করছে সরকার। দুই পক্ষের সম্মতিতে পথনকশা প্রকাশ করা হবে। এতে ১০টি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগের কথা বলা হয়। খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি), কেয়ারগিভিং, নির্মাণ শিল্প, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি, কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত, জাহাজ নির্মাণ ও তৈরি পোশাকশিল্প।
"