প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ অক্টোবর, ২০২৪

নয় মাসে সড়কে ঝরেছে পাঁচ সহস্রাধিক প্রাণ

চলতি বছরের গত ৯ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষের। আর আহত হয়েছেন সাড়ে ৯ হাজারের বেশি মানুষ। গতকাল রবিবার গণমাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানা যায়। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৮৫টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৯৮ এবং আহত ৯ হাজার ৬০১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৭৭ ও শিশু ৭২৯ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৯২৪ জন, যা নিহতের ৩৪.৩৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭.২১ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১২১ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা নিহতের ২০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮৮ জন, অর্থাৎ ১২.২৯ শতাংশ।

এতে আরো বলা হয়, এ সময়ে ৮৩টি নৌ দুর্ঘটনায় ১২৪ জন নিহত, ১২৫ জন আহত এবং ১৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৪৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২২৭ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯২৪ জন (৩৪.৩৬ শতাংশ), বাস যাত্রী ২৯৩ জন (৫.২৩ শতাংশ), পণ্যবাহী যানবাহনের আরোহী (ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-টাক্টর-লরি ইত্যাদি) ৪২০ জন (৭.৫০ শতাংশ), প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ আরোহী ২৯৫ জন (৫.২৬ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান ইত্যাদি) ১০৯৭ জন (১৯.৫৯ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহেন্দ্র-টমটম) ২৭৮ জন (৪.৯৬ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ১৭০ জন (৩.০৩ শতাংশ) নিহত হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮৪৯টি (৩৩.৭১ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২১৩৪টি (৩৮.৯০ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৭১টি (১৪.৫ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৬৭০টি (১২.২১ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬১টি (১.১১ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; সড়ক এবং সড়ক পরিবহন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব না হওয়া; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে।

সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; সড়ক এবং সড়ক পরিবহন নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব না হওয়া; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে; সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জীবনমুখী সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close