ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জিআই স্বীকৃতি পেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী ও টাঙ্গাইলের আনারস

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মিষ্টান্ন ছানামুখী ও টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলে উৎপাদিত আনারস।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়া দেশের আর কোথাও মিষ্টি ছানামুখী তৈরি হয় না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মিষ্টান্ন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মিষ্টান্ন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ডিপিডিটি কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেয়। কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কোনো একটি পণ্য চেনার জন্য জিআই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনকে নিশ্চিত করে। ডিপিডিটিতে ছানামুখী ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নম্বর ৪১।

২৪ সেপ্টেম্বর ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষতির জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো জিআই সনদে উল্লেখ রয়েছে, ভৌগোলিক নির্দেশক (যার নমুনা এতদসঙ্গে সংযুক্ত আছে) নিবন্ধন বইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নামে ২৯ ও ৩০ শ্রেণিতে জিআই-৭৫ নম্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি পণ্যের জন্য চলতি বছরের ৮ এপ্রিল থেকে নিবন্ধিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক (১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যšত্ম) মো. শাহগীর আলম প্রথমে ও পরে সদ্যবিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গত ২ এপ্রিল ‘ছানামুখী’ মিষ্টান্নকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ডিপিডিটির রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন পাঠান। সেখানে ছানামুখী মিষ্টান্নের বৈশিষ্ট্য, ভৌগোলিক নাম, ছানামুখীর বর্ণনা, উৎপাদনের পদ্ধতিসহ নানা বিষয় বি¯ত্মারিতভাবে উল্লেখ করেন।

জেলা শহরের আদর্শ মাতৃভান্ডারের দুলাল চন্দ্র মোদক বলেন, ৭ থেকে ৮ লিটার দুধের সঙ্গে এক কেজি চিনি দিয়ে তৈরি হয় এক কেজি ছানামুখী। প্রতি কেজি ছানামুখীর দাম ৮০০ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ছানামুখী জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারিভাবে ছানামুখীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলে উৎপাদিত আনারস জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের ভৌগোলিক নির্দেশক ইউনিট গত ২৪ সেপ্টেম্বর মধুপুরের আনারসকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি সনদ দেয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুমিন হাসানের সই করা সনদে ৩১ শ্রেণিতে জিআই-৫২ নম্বরে মধুপুরের আনারসকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে ফলটির চাষে গুণগত পরিবর্তন এবং বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের মিজি দয়াময়ী সাংমা ১৯৪২ সালে বাংলাদেশে প্রথম আনারস চাষ শুরুকরেন। এই গারো নারী ভারতের মেঘালয় থেকে চারা এনে তার বাড়িতে আনারস চাষ শুরুকরেছিলেন।

জিআই স্বীকৃতির তথ্য নিশ্চিত করে মধুপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘আšত্মর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের জিআই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আনারসের জিআই স্বীকৃতি লাভ মধুপুরবাসীর জন্য অত্যšত্ম আনন্দের ও গর্বের বিষয়। মধুপুর আনারস সারা দেশে জনপ্রিয়। এখন বিশ্ব এর সঙ্গে পরিচিত হলো।

এতে বিশ্বে মধুপুর আনারসের বাজার তৈরি হবে।’

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় অঞ্চলে বছরে কয়েকশ কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ আনারস উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে জায়ান্ট কিউ বা স্থানীয়ভাবে ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত এ অঞ্চলের প্রধান জাত। বাকিগুলো হলো হানি কুইন যা স্থানীয়ভাবে জলডুঙ্গি নামে পরিচিত এবং এমডি-২ ও আশ্বিনা।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার বলেন, ‘এ বছর জেলায় ৭ হাজার ৭৭৩ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মধুপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর এবং ঘাটাইল উপজেলায় ১ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর দুই উপজেলায় ৭ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে এবং ২ লাখ ৮২ হাজার টন আনারস উৎপাদিত হয়েছে।’

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, ‘মধুপুর ছাড়াও দেশের সিলেট ও পার্বত্য এলাকায় আনারসের চাষ হয়। তবে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার মানে হচ্ছে ভৌগোলিক নির্দেশ যুক্ত হওয়া। দেশে ও বিশ্ববাজারে এখন আনারস মানেই মধুপুরের আনারস। এখন আšত্মর্জাতিক বাজারে আনারস রপ্তানির সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close