নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার তুরাগ নদী
ক্ষতবিক্ষত, তবু পণ্য সরবরাহে এগিয়ে
দূষণ ও দখলে ক্ষতবিক্ষত, তবু ঢাকার তুরাগ নদীটি ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। সিমেন্ট, কয়লা, বালু, সার এবং পাথরের মতো সব ধরনের নির্মাণসামগ্রী এই নদীর মাধ্যমেই ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ঢাকা ঘিরে বৃত্তাকার নদীগুলো নৌপথে পণ্য সরবরাহে কতটা শৃঙ্খলা এনেছে তা এখনো স্বপ্নের মতোই। তবে এই নদীর প্রতি যে আচরণ হচ্ছে, তাতে এটি হত্যা বলাটাও কম হবে। নদীগুলো না থাকলে রাজধানীর বুক চিড়ে প্রতিদিন দাপিয়ে বেড়াত শত শত ট্রাক।
জানা গেছে, দখল এবং বর্জ্য জমার কারণে এই নদী বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ, শিল্প ও বাসিন্দারা নদীকে একটি ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করছে। গাবতলী, নবাবেরবাগ, বিসিল, মিরপুরসহ অনেক স্থানে নদীটি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০১৯ সালে হাইকোর্ট থেকে ‘আইনি ব্যক্তি’ মর্যাদা পাওয়ার পরও তুরাগের জন্য পরবর্তী বছরগুলো ভালো যায়নি। কারখানাগুলো নদীতে এবং গাজীপুরের আশপাশের খাল ও জলাভূমিতে বিষাক্ত তরল বর্জ্য ফেলে যাচ্ছে।
২০২৩ সালে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ রিভার ট্রাভেলারের নেটওয়ার্ক ৯৬টি স্থান চিহ্নিত করেছে, যেখানে বর্জ্য টঙ্গী থেকে শুরু করে ঢাকার কোড্ডা এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত তুরাগ নদীর ৪০ কিলোমিটার অংশকে দূষিত করছে। তাছাড়া শাহ, আকিজ, প্রিমিয়াম, স্ক্যান ও আমানসহ বেশির ভাগ সিমেন্ট কোম্পানির স্টেশন তুরাগ নদীর চারপাশের অন্য এলাকা ছাড়াও এখানে রয়েছে।
নদী ও ডেল্টা গবেষণা কেন্দ্রের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, হাইকোর্ট তুরাগ নদীকে একটি জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তবে, এই নদীর প্রতি যে আচরণ হচ্ছে, তাতে ‘আমরা যৌথভাবে এটি হত্যা করছি’ বলাটাও কম হবে। তারপরও নদীটি ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। সিমেন্ট, কয়লা, বালু, সার এবং পাথরের মতো সব ধরনের নির্মাণসামগ্রী তুরাগের মাধ্যমে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আকিজ প্রতি মাসে প্রায় ৪০ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট নিয়ে আসে বলে জানান কোম্পানির স্টেশন ইনচার্জ ওয়াহেদুজ্জামান। তিনি বলেন, এখান থেকে সিমেন্ট ঢাকা শহর, মানিকগঞ্জ এবং অন্যান্য অঞ্চলে যায়।
শাহ সিমেন্ট প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ব্যাগ সিমেন্ট সরবরাহ করে। প্রিমিয়াম সিমেন্ট তাদের মুন্সীগঞ্জের কারখানা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টন সিমেন্ট পরিবহন করে। আমিনবাজারে পালক ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মাশরুক নদীর তীরে কাজ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। তিনি জানান, এখান থেকে কয়লা উত্তরবঙ্গ, মানিকগঞ্জ, আরিচা, টাঙ্গাইল এবং অন্যান্য অনেক জায়গায় যায় এবং ইটভাটা ও ব্যাটারি কারখানার বয়লারগুলোয় ব্যবহার করা হয়।
মাশরুক জানান, তিনি সরাসরি দেখেছেন কীভাবে তার ব্যবসার সরবরাহ চেইনের মূল স্তম্ভ তুরাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, নদীতে চিহ্নিত এলাকা রয়েছে।
"