শোভন আহমেদ, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া)
ভেড়ামারায় অস্তিত্বহীন ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন নিয়ে তোলপাড়
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় এনায়েত উল্লাহ নামে এক অস্তিত্বহীন ব্যক্তির নিবন্ধন করা নিয়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের আইসিটি অফিস থেকে এই নিবন্ধন করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এনায়েত উল্লাহ ধরমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নয় বলে নিশ্চিত করেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল হক।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ জুলাই ধরমপুর ইউনিয়নের আইসিটি অফিস থেকে এনায়েত উল্লাহ নামের ১৬ বছরের এক কিশোরের জন্মনিবন্ধন করা হয়। সেখানে তার পিতার পরিচয় হিসেবে দেখানো হয় সাতবাড়িয়াার বাসিন্দা নুর আলমকে এবং মাতার পরিচয় হিসেবে দেখানো হয় একই অঞ্চলের মোসা. তারা বেগমকে। এনায়েত উল্লাহকে ৬নং ওয়ার্ডবাসী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয় এবং তার এলাকায় উল্লেখ করা হয় কাজীহাটাকে। কিন্তু বাস্তবে এনায়েত উল্লাহ এবং তার বাবা মা এলাকায় অস্তিত্বহীন। সে অন্য কোনো এলাকার বাসিন্দা বলে ধারণা করছে উপজেলা প্রশাসন।
এনায়েত উল্লাহ কুষ্টিয়া পৌরসভার কাছে ধরমপুর ইউনিয়নের দেওয়া জন্মনিবন্ধনের কাগজপত্র সাবমিট করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে গেলেই বাধে বিপত্তি। বিষয়টি জানাজানি হলে কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানকে বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ প্রদান করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, এনায়েত উল্লাহ এর জন্মনিবন্ধনে যেসব তথ্য দেওয়া আছে তা ভুল। বাস্তবে এনায়েত উল্লাহ নামের কেউ ধরমপুর ইউনিয়নে নেই। তার বাবা-মার যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেখানেও তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।
জন্মনিবন্ধনে ৬নং ওয়ার্ড হিসেবে কাজীহাটাকে উল্লেখ করা হলেও কাজীহাটা মূলত ১নং ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। ৬নং ওয়ার্ড উত্তর ভবানীপুরের মধ্যে পড়ে। উপরোক্ত তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন কাজীহাটা ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. দিরাজ আলী ও ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. নজরুল ইসলাম। তাছাড়াও স্থানীয় জনগণ জানিয়েছেন, এনাযেত উল্লাহ ও নুর আলম নামে কাজিহাটার ১নং ও উত্তর ভবানীপুরের ৬নং ওয়ার্ডের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়নের এক মেম্বার বলেন, বহু দিন ধরে একটি চক্র আমাদের ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন নিয়ে এমন কাজ করে আসছে। এর আগেও একাধিকবার এই সমস্যা হয়েছিল। পরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমন কাজ না করার অঙ্গীকার করে আবার করেছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে নুর আলমের জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার ব্যবহার করে জানা গেছে, তার প্রকৃত নাম মো. ফারুক হোসেন দালাল। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পরানদাহ এলাকার বাসিন্দা। ধরমপুর ইউনিয়নের সচিব মো. শাহজাহান সিরাজকে জন্মনিবন্ধনের বিপরীতে কাগজপত্র দেখাতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
ইউনিয়নের আইসিটি উদ্যোক্তা মাহফুজা খাতুন মুক্তি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আগের উদ্যোক্তা হয়তো করে গেছে।
ঢাকার হেড অফিসে কর্মরত সহকারী নিবন্ধন কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, আমি যত দূর কাগজপত্র দেখেছি তাতে নির্ভুলই মনে হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ডকুমেন্টসহ তার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, এটা স্থানীয় (ধরমপুর) অফিসের বিষয়, তারা ভুল করলে দোষ তাদের। আপনি ওদের সঙ্গেই যোগাযোগ করুন।
ধরমপুর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. শামসুল হক বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ঘটেনি। হয়তো ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে।
ভেড়ামারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, জন্মনিবন্ধন জালিয়াতির বিষয়টি সম্পর্কে অধিকত তদন্তের জন্য উপজেলা থেকে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরও হাজির করার বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানদের বলেছি।
"