নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকার বদলেছে, বদলায়নি বাজার সিন্ডিকেট : ক্যাব
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে, সরকার ডিম-মুরগির যে দাম বেঁধে দিয়েছে, তা ব্যবসায়ীদের মুনাফা বাড়াচ্ছে ঠিকই, ঠকাচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। এখনো বিগত পদ্ধতিতেই দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে, যাতে সরকার বদলালেও বদলায়নি বাজারের সিন্ডিকেট। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে ক্যাব।
বাজারের চেয়ে বেশি দামে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেওয়া একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্ধারণ প্রক্রিয়া উল্লেখ করে ক্যাব জানিয়েছে, এটি সরকারি দপ্তরের এক ধরনের খামখেয়ালিপনা। এতে করে বাজার আরো অস্থির হতে পারে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সপ্তাহখানেক দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও নিত্যপণ্যের বাজারে সব নিত্যপণ্যের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী। মুরগির দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও ডিমের দাম ডজন ১৫০ টাকার নিচে নামেনি। ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে আমদানিও অব্যাহত রেখেছে সরকার; তারপরও বাজারে সুফল আসেনি বলে জানিয়েছে ক্যাব।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডিম ও মুরগির বাজারে অস্থিরতা ঠেকাতে ক্যাব থেকে বারবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। পরে সরকার নির্দিষ্ট দাম বেঁধে দিলেও এ প্রক্রিয়ায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং পোলট্র্রি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে ভোক্তা প্রতিনিধি না থাকা হতাশার জন্ম দিয়েছে। তাহলে কি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণেই এই গ্রুপ গঠিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্যাব। এর আগেও বেঁধে দেওয়া দামে কোনো পণ্য বাজারে পাওয়া যায় নি উল্লেখ করে ক্যাব জানায়, পণ্যের দাম বাজারের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করে দিয়ে ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। অসাধু মজুদদারীদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে দাম বেঁধে দিয়ে কখনোই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আর বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করে দিলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নেবে। অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর শুধু দাম নির্ধারণ করে বাজার তদারকি না করলে বাজার আরো অস্থির হয়ে উঠবে এবং করপোরেট গ্রুপগুলো এ সুযোগে আবারও আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠবে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে ক্যাব। সরকারের দপ্তরগুলো বড় বড় করপোরেট গ্রুপগুলোকে সুযোগ করে দেওয়ার কারণে সরকারের উদ্যোগের সুফল প্রান্তিক পর্যায়ে পাওয়া যাবে না। দাম নির্ধারণ বা যেকোনো সংকট হলে শুধু এ খাতের বড় করপোরেট গ্রুপগুলোকেই ডাকা হয়। প্রান্তিক, ছোট ব্যবসায়ী ও খামারিদের ডাকা হয় না। দাম নির্ধারণ বা যেকোনো সংকট সমাধানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রান্তিক খামারি, ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ভোক্তা সংগঠনটি।
এছাড়া সরকারি দপ্তরগুলো দাম নির্ধারণের সময় বাজার থেকে পর্যাপ্ত তথ্য না নিয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়াই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। সরকার পরিবর্তন হলেও বিগত সরকারগুলো আমলের দাম নির্ধারণের প্রচলিত পদ্ধতিটা অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে কোনো সুফল আসছে না বলে দাবি ক্যাবের। শুধু বাজারে দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, বাজারে সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত বাজার তদারকি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রয়োজনে বাজার তদারকির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমিয়ে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে জানায় ভোক্তা সংগঠনটি।
"