ববি প্রতিনিধি

  ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজ

বরিশালে দুদল শিক্ষার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৫০

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। এসময় বেশ কয়েকটি বাস এবং বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ, ভাঙচুর এবং আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। মঙ্গলবার দুপুরে বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী সমন্বয়ক পরিচয়ে বিরোধ নিরসনে ওই নারী শিক্ষার্থী বাসায় গেলে সেখানে কথা কাটাকাটি হয়।

এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ওই নারী শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে তার বন্ধুদের জানালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন সেখানে যায়। মা এবং তাকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে জানালে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের মারধর করে কয়েকজনকে আহত করে ববি শিক্ষার্থীরা। পরে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে আসে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ববি শিক্ষার্থীদের খুঁজতে থাকে। রাত ১০টায় নগরীর বটতলা এলাকায় ববির দুই শিক্ষার্থীকে পেয়ে মারধর করে তারা। তখন প্রাণ বাঁচাতে ওই দুজন দৌঁড়ে পাশে থাকা বটতলা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন। সহপাঠীদের মারধর করার খবর পেয়ে রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ থেকে ৫০ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে সেখানে যায়। বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এতে চালকসহ ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়।

সহপাঠীদের মারধর করার খবর পেয়ে বাস ট্রাক বোঝাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার এলাকায় জড়ো হয়। পরে তারা বিএম কলেজে গিয়ে হামলা চালায়। এসময় ট্রাক ভর্তি পাথর, বেশ কয়েকটি থ্রি হুইলার ভর্তি ইঁটের টুকরা, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে যায় ববি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সবার হাতেই ছিল রড, পাইপ, লাঠি আর ধারালো অস্ত্র। তারা রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক হল এবং শ্রেণি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলার প্রথম পর্যায়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করলেও সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায় বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি।

এরপর বিএম কলেজের পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ববি শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রশাসনিক ভবন ও কলেজের ৪টি বাস ভাঙচুর করা হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর পৌনে ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ল্যান্স কর্পোরাল বুলবুল নামে এক সেনা সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেলেও নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।

এদের মধ্যে অন্তত ২৫ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে। হামলা চালাতে গিয়ে পাঁচ ববি শিক্ষার্থী বিএম কলেজের ভেতরে আটকা পড়েছে এবং তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেনাবাহিনীকে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখনো মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে রয়েছে সেনাবাহিনী।

এর আগে বিরোধপূর্ণ বাড়ি দখল করাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার বিকেলে নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সামনে ওই মানববন্ধন করেন ববি ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close