নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭১

দেশের ১১ জেলায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭১ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ফেনী ও কুমিল্লায় মারা গেছেন চারজন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত কুমিল্লায় ১৯, চট্টগ্রামে ৬, ফেনীতে ২৮, নোয়াখালীতে ৯, কক্সবাজারে ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজারে ও লক্ষ্মীপুরে ১ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৫ পুরুষ, ৭ নারী ও ১৯ শিশু রয়েছেন।

এছাড়া ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারসহ ১১টি জেলার ৬৮টি উপজেলায় ৫ লাখ ৮২ হাজার ১৫৫টি পরিবার পানিবন্দি পড়েছে। ১১টি জেলার ৫০৪টি পৌরসভা বা ইউনিয়নে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ লাখ ২৪ হাজার ২০২ জন। এরই মধ্যে ৩ হাজার ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৬ জন আশ্রয় নিয়েছেন এবং ৩১ হাজার ২০৩টি গৃহপালিত পশু রাখা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ৪৬৯টি মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ, ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, অন্যান্য খাবার দেওয়া হয়েছে। শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া কিছু মানুষ তাদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।

এদিকে অক্সফাম ইন বাংলাদেশ জানিয়েছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী ও নোয়াখালী জেলার মানুষ। এ দুই জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রায় ডুবে গেছে সব বাড়িঘর ও ধ্বংস হয়েছে ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর। এছাড়া এ দুই জেলার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির সুবিধা শতভাগ অচল হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার চলমান বন্যায় নিয়ে অক্সফাম ইন বাংলাদেশের প্রকাশিত জরুরি চাহিদা নিরূপণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন বলছে, বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করায়, বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর ক্ষতচিহ্ন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দুর্গতদের মধ্যে জীবিকা হারানো এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুই জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ৭২ শতাংশ প্রতিদিন দু’বেলা খেতে পারছে, যা পর্যাপ্ত নয়। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খোলা জায়গায় মলত্যাগ বাড়ছে, যা ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব রোগে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে বাংলাদেশের বন্যা সম্পর্কে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে আগে দেখা যায়নি। বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ডুবে গেছে। জীবিকা হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতি, দুর্গত জনগোষ্ঠীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

গত ২০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ বন্যায় ফেনী, নোয়াখাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ ১১ জেলার বিশাল অংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৫ লাখের বেশি মানুষ এবং প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো, বাড়িঘর, কৃষি ও মৎস্য খাত। এসব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দুর্গত জনগোষ্ঠীদের জরুরি ও ধারাবাহিক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। বিশেষ করে দুর্গত জনগোষ্ঠীদের জন্য জরুরিভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানি, নগদ অর্থ সহায়তা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর প্রয়োজন। মধ্যমেয়াদে ঘরবাড়ি মেরামত, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং খাদ্য উৎপাদনে কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও টেকসই সমাধানে ওয়াশ সুবিধা (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা) নিশ্চিত করা, কমিউনিটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং আয়মূলক কার্যক্রম প্রচার করা জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close