প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ আগস্ট, ২০২৪

ব্রিটেনে দাঙ্গার টার্গেট মুসলিমরা উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিরা

ব্রিটেনে চলমান দাঙ্গার মূল টার্গেট অভিবাসী মুসলমানরা। লন্ডন শহর অভিবাসীবহুল হওয়ায় লন্ডনে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো থাকলেও যেসব শহর ও এলাকায় অভিবাসীর সংখ্যা একেবারেই কম, সেখানে অভিবাসীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশিদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে অভিবাসীদের পক্ষে ও উগ্রডানপন্থিদের বিরুদ্ধে এখন সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বাংলাদেশিসহ লাখো ব্রিটিশ। শ্বেতাঙ্গরাও এ প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরো মিছিলের ডাক দিয়েছে উগ্রডানপন্থিরা। প্রতিবাদে গত দুদিনে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা বর্ণবাদবিরোধী স্লোগান দেন। ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটি এ পরিস্থিতিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কমিউনিটির মসজিদগুলোয় একের পর এক হামলার হুমকি আসছে। হিজাব পরিহিত বাংলাদেশি নারীরা কাজে বা জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি ছাড়া বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের ছুটির সময় চললেও উদযাপন করতে পারছেন না ব্রিটেনের লাখ লাখ মুসলমান পরিবার।

প্রায় দশ দিন ধরে চলমান দাঙ্গায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটি। ব্রিটেনে যখনই বামপন্থি লেবার সরকার ক্ষমতায় আসে, তখনই একটি পক্ষ উগ্রডানপন্থিদের উসকে দেয়। দেশজুড়ে দাঙ্গার পেছনে উগ্রডানপন্থিদের পাশাপাশি রয়েছে অভিবাসীবিরোধী বর্ণবাদীরা, এমন বাস্তবতা এখন স্পষ্ট। ইডিএল ও টমি রবিনসনের পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করছে। ১৯৪৭ সালের পর এদেশে মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কলকারখানা চালু রাখার স্বার্থে অর্থনীতির উন্নতির জন্য ব্রিটেন সরকার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীদের বিভিন্ন ভিসা দিয়ে নিয়ে আসে। ব্রিটেনে সত্তরের দশক থেকে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন রাজন উদ্দীন জালাল। তিনি বলেন, আমাদের প্রজন্ম এখন বৃদ্ধ। সত্তর ও আশির দশকে আমরা যারা লড়াই করেছি বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে, তাদের অনেকেই মারা গেছেন। অনেকে অসুস্থ। বর্ণবাদীদের রুখতে কমিউনিটির তরুণ প্রজন্ম, মসজিদগুলোসহ সবার সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।

আগামী সোমবার করণীয় নির্ধারণে তারা সভা ডাকেছেন বলে জানান রাজন উদ্দীন জালাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য, লন্ডন স্কুল অব কমার্স অ্যান্ড আইটির সিইও নসরুল্লাহ খান বলেছেন, এ দেশটি সবার। অভিবাসীদের নিয়ে খেলা চলছে। বর্ণবাদীরা এর নেপথ্যে। এখানে দেশের স্বার্থে ব্রিটেনে দলমত-নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রবীণ নেতা সো. লোকমান উদ্দীন বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা তাদের কর্মসংস্থান কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ বর্ণবাদীদের। অথচ শ্বেতাঙ্গরা পরিবারে পরিবারে তিন-চার প্রজন্ম ধরে কোনো কাজেই যায়নি, সম্পূর্ণভাবে সরকারি সুবিধাভোগী জীবনযাপন করছে, এটি প্রমাণিত বাস্তবতা।

শিল্পী, অভিনেতা ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে লন্ডনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেওয়া স্বাধীন খছরু বলেন, ব্রিটেনে এখন বাংলাদেশিদের চতুর্থ প্রজন্ম চলছে। এখন এ পরিস্থিতি দেখতে হবে ভেবে-চিন্তে। বিলেতের লন্ডন শহরের এডলার স্ট্রিট, হোয়াইট চার্চ লেন এবং হোয়াইট চ্যাপেল হাই স্ট্রিটে অবস্থিত একটি ছোট পার্ক, যেটির আগের নাম ছিল সেন্ট মেরিস পার্ক। পার্কটির ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে ইংরেজিতে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘আলতাব আলী পার্ক’। আলতাব আলী লন্ডনের বাংলাদেশি অভিবাসী ছিলেন। তিনি কারখানা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গত শতকের সত্তরের দশকে ব্রিটেনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চলছিল। ১৯৭৮ সালের ৪ মে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে পূর্ব লন্ডনের এডলার স্ট্রিটে অজ্ঞাত কয়েকজন বর্ণবাদীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন তিনি। এ আন্দোলনে দুজন বাংলাদেশি খুন হন।

বর্ণবাদী হামলায় আলতাব আলীর মৃত্যুতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল হাজারো মানুষ। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। মানুষ রাজপথে নেমে আসে। আলতাব আলীর মৃত্যু এ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে কাজ করে। ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে আলতাব আলীর নাম। এজন্যই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৯৮ সালে পূর্ব লন্ডনের এডলার স্ট্রিটে অবস্থিত সেন্ট মেরিস পার্ককে আলতাব আলী পার্ক নামকরণ করা হয়। লন্ডনে আলতাব আলীর নামে পার্ক বিলেতের মাটিতে বাংলাদেশিদের বর্ণবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হতে প্রেরণার মিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close