কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০১ আগস্ট, ২০২৪

ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মতের বাণিজ্যিক রাজধানী বলে খ্যাত চট্টগ্রামের ব্যবসা বাণিজ্য কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বিশেষ করে ইন্টারনেট না থাকায় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাজ করতে পারছিল না চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম। ফলে দেখা দেয় নানা জটিলতা। ইন্টারনেট চালু হবার পর থেকে কিছুটা হলেও স্ব¯িত্ম নেমে আসে ব্যবসা-বাণিজ্যে। দেশের আমদানি-রপ্তানির ৮০ শতাংশের রাজস্ব যোগানদাতা চট্টগ্রাম। গত কয়েকদিন ধরে চলা হট্টগোলের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমের কাজকর্ম হয়নি বললেই চলে। ইন্টারনেট সংযোগ ফিরে আসার পর থেকে গত তিন দিনে বন্দর ও কাস্টমসে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। কড়া নিরাপত্তায় চলছে কাজ। পণ্য খালাস ও পণ্য বোঝাই দুটোই পুরোদমে চলছে বন্দরে। পণ্য আমদানি ও রফতানি কাগজে কলমে কাস্টমসের কাজও থেমে নেই।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কাস্টমস ও বন্দরের প্রায় সব কাজই ছিল ইন্টারনেট নির্ভর। কোনো জাহাজ আসছে, কোনো জাহাজে যাচ্ছে। কোনো জাহাজ পাইপলাইনে রয়েছে, কি পণ্য বোঝাই করে জাহাজগুলো আসছে প্রায় সবগুলো কাজ করতে হয় ইন্টারনেট বা অনলাইনে। যেহেতু ইন্টারনেট ছিল না তাই হতাশা কাজ করছিল সবার মধ্যে। ব্যবসায়ীদের কোনো সšেত্মাষজনক জবাব দিতে পারছিলেন না সংশি¯œষ্ট কর্তৃপ—গ। ইন্টারনেট চালুর পর কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠেছে বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কয়েকদিন ধরে থমকে ছিল অ্যাসাইকোডা ওয়ার্ল্ড সার্ভার। এ সার্ভার সচল থাকলে কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রির কাজ চলে। কয়েকদিন ধরে জমে থাকা বিল অব এন্ট্রির কাজ জোরে শোরে শুর¤œ হয়েছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকশ গুণ বেশি বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে একটি সি এন্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের স্বত্বাধিকারী মো. ইলিয়াছ জানান, ইন্টারনেট এখনো ধীর গতিতে আছে। ফলে কাজকর্ম সম্পাদন করতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তারদের সামনে ফাইলের ¯ত্মূপ। কয়েকদিনের কাজ জমে থাকার ফলে অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। তারপরও সবাই বিগত দিনগুলোর কাজ সম্পন্ন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে।’

কাস্টম হাউসের উপকমশিনার খায়র¤œল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু নেট ছিল না, তাই সমস্যা হয়েছিল। এখন আগের চেয়ে বেশি কাজ হচ্ছে।’

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার আগের পাঁচ দিনে দাখিল হয়েছে বিল অব এক্সপোর্ট ৩০ হাজার ৬৫৪টি এবং বিল অব এন্ট্রি ১২ হাজার ৬৫টি। আর চার দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার প্রথম দিনে কাস্টমস ম্যানুয়ালি কিছু আগের চালানে কাজ করলেও পরের তিন দিনসহ বিল অব এন্ট্রি ও এক্সপোর্টের কাজ বন্ধ থাকে। ২৫ জুলাই থেকে ইন্টারনেট সংযোগ পেয়ে বিল অব এক্সপোর্ট ২৯ হাজার ৫২৮টি এবং বিল অব এন্ট্রি ৭ হাজার ৩৫৬টি এসাইকোডা ওয়ার্ল্ড সার্ভারে দাখিল হয়েছে। অর্থাৎ গড়ে ১৭শ বিল অব এন্টি ও এক্সপোর্ট হলেও ইন্টারনেট পাওয়ার শেষ চার দিনে (২৫ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই) দাখিল হয়েছে ২ হাজার ৩শরও বেশি।

একই অবস্থা চট্টগ্রাম বন্দরেও। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জেরে কয়েকদিন বন্ধ ছিল চট্টগ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর —গতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ইপিজেডে কাজ হয়নি বললেই চলে। এ অবস্থায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কনটেইনার আটকে যায় বন্দরে। একইভাবে অনেকে সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেনি। সব মিলে বন্দর কর্তৃপ—গ কনটেইনারের ওপর কয়েকদিনের ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করে। তারপরও অনেকে সঠিক সময়ে পণ্য বিদেশি বায়ারদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। বর্তমানে পোশাক শিল্পের কাজ পুরোদমে শুর¤œ হয়েছে।

স্বাভাবিক হয়ে আসছে দেশের ওয়ালস্ট্রিট খ্যাত খাতুনগঞ্জ। বেড়েছে ট্রাকের সারি। প্রতিদিন এখান থেকে স্বাভাবিক সময়ে হাজার খানেক ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। বন্দর থেকে খালাস করা পণ্য নিয়ে ট্রাকগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে কড়া পাহারায়।

ট্রাক মালিক ইব্রাহিম জানান, ‘দেশের বর্তমান যা অবস্থা তাতে কেউ ট্রাক দিতে চাইছে না। তারপরও কদিন বসিয়ে রাখা যায়। পথে ঝুকি থাকলেও পণ্য নিয়ে ট্রাক যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।’

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন জানান, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যের অর্ডার আসছে। এখান থেকে প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়ি ভাড়াও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তার পরও কেউ গাড়ি দিতে চাইছে না। জর¤œরি প্রয়োজনে যেখানে সেখানে কোনোমতে পণ্য পাঠাচ্ছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close