আবদুল্লাহ আল মামুন, মাদারীপুর
আবেদ আলীর প্রতিপত্তি নিয়ে মানুষ ছিল প্রশ্নহীন
পিএসসির প্রশ্নফাঁস করে কোটি টাকার মালিক সৈয়দ আবেদ আলী তার এলাকার মানুষের কাছে একজন ভালো মানুষ। মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা ও দান খয়রাত করে এলাকায় এখন সে দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। করেছেন পোস্টারও। এলাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করলেও নিজ গ্রামের মানুষের মনে জাগেনি কোনো প্রশ্ন।
সৈয়দ আবেদ আলীর বাবা ছিলেন দিনমজুর। তার বাবা মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব বোতলা গ্রামের দিনমজুর মৃত আবদুর রহমান মীর। অভাবের সংসারে আট বছরের আবেদ বাড়ি ছেড়ে ঢাকা যায়। সেখানে কী করেছে জানে না কেউ। হঠাৎ দুই-তিন বছর আগে এলাকায় এসে দান খয়রাত শুরু করে আবেদ আলী। এলাকার মানুষের কাছে বলতেন, তার রিয়েল এস্টেটসহ অনেক ব্যবসা আছে। তিনি একজন শিল্পপতি। এলাকায় মায়ের পৈতৃক জমিতে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের পাশেই নির্মাণাধীন ২ কোটি টাকার ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ শেষ পর্যায়। ভাঙা ব্রিজ-ডাসার সড়কের সরকারি জমি দখল করে কোটি টাকার গরুর খামার করার কাজ শুরু করেন। এ বছর ঈদুল আজহায় তিনটি গরু কোরবানি দেন তিনি। এলাকার মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ান। শুধু তাই নয়, যাওয়ার সময় নগদ ৫০০ টাকা ও ১ কেজি কোরবানি দেওয়া গরুর মাংস বিতরণ করেন। আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের ঘটনা সামনে এলেও এখনো স্থানীয়রা ভালো মানুষ মনে করেন আবেদ আলীকে।
এলাকার ৩৬ বছরের যুবক মামুন মাতুব্বর বলেন, ১০-১৫ বছর আগেও দেখেছি আবেদ আলীদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। রাতারাতি এত টাকাওয়ালা কীভাবে হলো আমার বোধগম্য নয়। পূর্ব কমলাপুরের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী জানান, আবেদ আলী খুবই ভালো মানুষ। আগে সচিবলায় চাকরি করত। বর্তমানে ব্যবসা করে। সামাজিক লোক। মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, আবেদ আলী জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। ঢাকার কাওরান বাজারে নাকি কাঁচা মালও টানছে। বর্তমানে তার ভালো নাম ডাক। এলাকার মানুষদের যেকোন বিপদ আপদে সাহায্য করে।
স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, আবেদ আলীর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হলেও ভাগ্য ফেরেনি তার ভাইদের। এমনকি ভাইদের কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেন না তিনি। বড় ভাই জাবেদ আলী এখনো দিনমজুরের কাজ করেন। ছোট ভাই ছাবেদ আলী অটো চালায়। মেজো ভাই আবেদ আলীর প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন দুই ভাই ও তাদের পরিবার।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একটি হোটেলের শেয়ার বিক্রি নিয়ে গত ১৮ মে সৈয়দ আবেদ আলীর দেওয়া প্রতারণামূলক পোস্ট নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এলাকা জুড়ে। গত সোমবার সারা দেশে সৈয়দ আবেদ আলী আলোচনায় আসার পর, কুয়াকাটার হোটেল নিয়ে তার দেওয়া মিথ্যা পোস্ট নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ মে ফেসবুক পোস্টে (হোটেল সান মেরিনার) প্রস্তাবিত তারকা মানের হোটেলের সাইনবোর্ডের ছবি দিয়ে শেয়ার কিনতে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন আবেদ আলী। সেখানে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর করেছেন এমন দাবিও করেন।
তার নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টটি হলো ‘আমাদের নতুন হোটেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা। সমুদ্রকন্যার পারে আজীবন নিজের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা ও একই সঙ্গে একটা হোটেলের মালিকানা অর্জন করতে আপনিও শেয়ার কিনতে পারেন। শেয়ার কিনতে যোগাযোগ করুন।’
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে হোটেল সান মেরিনার জায়গাটি ঘুরে দেখা যায়, কুয়াকাটার রাখাইন মহিলা মার্কেট রোডের ওই জমিতে এখনো কোনো হোটেল নির্মিত হয়নি। প্রস্তাবিত হোটেল সান মেরিনা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. ফারুক হোসেন রুবেল জানান, আমি আট বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি করি। আবেদ আলী নামের এই লোককে কখনো আমাদের মালিকের সঙ্গে দেখিনি।
হোটেল সান মেরিনার (প্রস্তাবিত) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত আমি একা এই জমির মালিক। কোনো পার্টনার নেই। আমরা শেয়ার বিক্রির জন্য সাইনবোর্ড লাগিয়েছি। আবেদ আলী নামের এই লোককে আমি চিনি না। আমার টাঙানো ছবি দিয়ে তিনি শেয়ারের মালিকানা দাবি করে প্রতারণা করেছেন। আমি এ জন্য ঢাকার গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করব।
কালকিনি (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, সৈয়দ আবেদ আলী সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাকিম তালুকদার বলেন, এজন্য কি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। দ্রুত অবৈধ সম্পত্তি জব্দের দাবি করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এদিকে, গ্রেপ্তার আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগ। তাকে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সহসভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ অনিক হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনের নীতি ও নৈতিকতা পরিপন্থি কার্যকলাপের সঙ্গে লিপ্ত থাকায় সিয়ামকে ডাসার ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
"