বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি

  ১৮ নভেম্বর, ২০২৩

বরগুনার বেতাগী

ডিলারের স্বাক্ষর জাল চাল না দিয়ে কার্ড ছুড়ে ফেলার অভিযোগ

বরগুনার বেতাগীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের স্বাক্ষর জাল করে চাল না দিয়ে গালিগালাজ করে কার্ড ছুড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। তবে অস্বীকার করেছেন ওই ইউপি সদস্য।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বরগুনার বেতাগীর ১ নম্বর বিবিচিনি ইউনিয়নে সুলভমূল্যে ৬০০ মানুষের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কর্মসূচি শুরু হয়। বর্তমানে বিবিচিনি ইউনিয়নে এই চাল ৮৮৫ জনের মধ্যে বিতরণ এবং প্রতি কেজি চালের মূল্য ১৫ টাকা ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ২১ জুন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার কারণে ডিলার হিসেবে নিজের নাম পরিবর্তন করে স্ত্রী সীমার নাম দেন মজিবর রহমান খন্দকার। এদিকে সীমা নিজেই জানেন না যে, তিনি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির একজন ডিলার।

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ছালমা চাল আনতে গেলে তাকে চাল না দিয়ে কার্ড ছুড়ে ফেলে দেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউসুফ আকন ও ট্যাক অফিসার শাওনের সামনে গালিগালাজ করেন। সাইদুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগীর ৪ মাসের চাল বাকি থাকলেও তাকে দুই মাসের ৬০ কেজি চাল দিয়েছে। বাকি চাল না দিয়ে তাকেও পাঠিয়ে দেন ডিলারের স্বামী ইউপি সদস্য মজিবর।

একই অভিযোগ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তৈয়বা আলী মৃধার (৭০)। ৩ মাসের চাল দেওয়া কথা বলে ২ মাসের চাল দিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেন মজিবর খন্দকর। তিনি বাকি চাল চাইলে তাকে বলেন, যদি মেম্বার বলে তাহলে বাকি চাল দিব না হলে দেব না।

সরেজমিনে ডিসিরহাট বাজারে দেখা যায়, ইউপি সদস্য মো. মজিবর রহমান খন্দকার স্ত্রী সীমার স্বাক্ষর জাল করে নিজেই চাল বিক্রি করছেন। জানা যায়, তিনি নিজ এলাকার জনসাধারণের কাছে একাধিকবার দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেছেন, ‘স্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে চাল বিক্রি করছি। এটা গোপন করে লাভ কী?’

জানা যায়, বিবিচিনি ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৪৩৭ জন ক্রেতাকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। আবার অনেকের থেকে কার্ডের জন্য ১০০ টাকা করে মোট ৮৭ হাজার চারশ টাকা হাতিয়ে নেন ডিলার ও ইউপি সদস্য মজিবর রহমান খন্দকার।

চাল নেওয়া শতাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, মেম্বার মজিবর বছরে প্রায় তিনবার তাদের কাছ থেকে কার্ডের জন্য ১০০ টাকা করে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, মজিবর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় আমরা ভয়ে মুখ খুলতে পারি না।

ডিলারের বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. মজিবর খন্দকারের স্ত্রী সীমা ফোনে জানান, তার স্বামী চাল বিক্রি করে সেটা সে জানে, টাকা নিয়েছেন কি না তিনি জানেন না। তবে এ নিয়ে এত ঝামেলা হতে পারে, সেটি তিনি জানতেন না।

ইউপি সদস্য মো. মজিবর রহমান খন্দকার বলেন, যা করি সব অফিস ম্যানেজ করেই করি। কার্ডের জন্য আমি টাকা নেইনি।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বলেন, আপনার মাধ্যমে অভিযোগ পেলাম আর এটি দেখার দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সততা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close