প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০১ অক্টোবর, ২০২৩

মশা নিয়ে অবহেলা নয়

পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০০-এর মতো প্রজাতি রোগ ছড়ায়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, মশা থেকে ২০টির মতো রোগ ছড়ায়। পৃথিবীতে কীটপতঙ্গের আক্রমণে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যান, তাদের মধ্যে মশাবাহিত রোগে মারা যান সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ। কীটতত্ত্ববিদ এবং গবেষকরা জানান, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশার খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকায়ই ১৪টি প্রজাতির মশা পাওয়া যায়। কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশাবাহিত পাঁচটি রোগের কথা জানা যায়।

ম্যালেরিয়া : স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা দেখা যায়, এদের মধ্যে ৭টি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। এর মধ্যে চারটি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭২টি থানায় ম্যালেরিয়া রোগের উপস্থিতি রয়েছে। মূলত পার্বত্য ও সীমান্ত এলাকায়ই ম্যালেরিয়া বেশি দেখা যায়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, মারা যান ১৫৪ জন। পরে এ সংখ্যা কমে আসে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেন, এখন ম্যালেরিয়া প্রকোপের ৯০ শতাংশের বেশি হয় তিন পার্বত্য জেলায়। তিনি জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে।

ফাইলেরিয়া : কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি এবং ম্যানসোনিয়া মশার একটি প্রজাতির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়া রোগ ছড়ায়। একে স্থানীয়ভাবে গোদ রোগও বলা হয়। বাংলাদেশের ৩৪টি জেলায় ফাইলেরিয়া আক্রান্ত রোগী দেখা যায়।

ডেঙ্গু : এডিস মশার দুটি প্রজাতি- এডিস ইজিপ্টি এবং অ্যালবোপিকটাস। মূলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। এডিস মশা পাত্রে জমা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। সাধারণত বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়। ফলে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও এ সময়ে বেড়ে যায়। চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকগুণ বেড়েছে। ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আক্রান্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি খারাপ না হওয়া পর্যন্ত লোকে ডাক্তারের কাছে যায় না। তিনি বলেন, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখামাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সঙ্গে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ খেয়াল রাখতে হবে।

চিকুনগুনিয়া : চিকুনগুনিয়া রোগও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে। চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মতো। তবে মাথাব্যথা, বমি ভাব, দুর্বলতা, সর্দি-কাশি এবং র‌্যাশের সঙ্গে শরীরে হাড়ের জয়েন্ট বা সংযোগস্থলে তীব্র ব্যথা হয়। চিকুনগুনিয়া হলে অধিকাংশ সময় তিন থেকে চার দিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়। কিন্তু হাড়ের সংযোগস্থলগুলোয় হওয়া ব্যথা কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ভোগায়।

জাপানিজ এনসেফালাইটিস : অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, জাপানিজ এনসেফালাইটিস রোগটি কিউলেক্স মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ১৯৭৭ সালে মধুপুর বন এলাকায় প্রথম জাপানিজ এনসেফালাইটিস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। এরপর বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম এবং খুলনা অঞ্চলে এ রোগ দেখতে পাওয়া যায়। মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। আক্রান্ত হওয়ার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে মৃত্যুসহ নানা ধরনের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এডিস মশা সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার আগে কামড়ায়। ফলে এ দুই সময়ে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি খাটিয়ে ঘুমাতে হবে। বাড়ির ছাদে বা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনে, বাতিল টায়ার কিংবা প্লাস্টিক কনটেইনার- কোথাও যাতে তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি পানি জমা না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close