অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
বাড়ির ছাদে মুক্তা চাষ
যশোরের অভয়নগর উপজেলার এক্তারপুর গ্রামে বাড়ির ছাদে মুক্তা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কলেজছাত্র আব্দুর রহমান। তিনি উপজেলার এক্তাপুর গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে।
জানা যায়, আব্দুর রহমানের বাবা একজন শ্রমিক। টানাপড়েনের সংসার। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় সবাই যখন ঘরবন্দি, তখন কাজ হারিয়ে দিশাহারা আব্দুর রহমানের পরিবার। ঠিক তখন শ্রমিক বাবাকে সংসারে সহযোগিতার জন্য কিছু একটা করার পরিকল্পনা করে, সে তখন রাজঘাট জাফরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। ইউটিউবে মুক্তা চাষের ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তা চাষের খামার পরিদর্শন ও খামারিদের পরামর্শে বাড়ির পুকুরে অল্প কিছু ঝিনুক দিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে। ফল ভালো হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির ছাদে পানির হাউজ করে প্রথমে ৫০০ ঝিনুক দিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করেন। আর তাতেই আসে অভাবনীয় সফল্য। অভাব-অনটনের সংসারে জেগে ওঠে আশার আলো। এরপর ঝিনুকের (মুক্তা) সঙ্গে রঙিন মাছের চাষ শুরু করেন তিনি। রঙিন মাছের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষ করে এলাকায় আলোচনায় আসেন আব্দুর রহমান। এরপর ‘এগ্রো ফার্মিং মুক্তা চাষ ট্রেনিং সেন্টার’ খুলে অনেক যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। ৫০০ ঝিনুক দিয়ে শুরু করে এখন এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজারে। গত ৩ মাস আগে ঝিনুকের পাশাপাশি একই হাউজে পরীক্ষামূলকভাবে ছাড়েন রঙিন মাছ। এক্ষেত্রেও দেখা দেয় বড় ধরনের আর্থিক আয়ের সম্ভাবনা। এখন প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকার মুক্তা বিক্রি করেন তরুণ এ উদ্যোক্তা। আব্দুর রহমান উপজেলার নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
জানতে চাইলে আব্দুর রহমান জানান, নতুন কিছু করার বাসনা থেকে ইউটিউব দেখে এ মুক্তা ও রঙিন মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। এখন আমি দেশের নামকরা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে মুক্তা সাপ্লাই দেই। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা উৎসুক যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে মুক্তা ও রঙিন মাছের খামার আরো প্রশস্ত করতে পারব। এতে করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থার সম্ভব হবে। উৎপাদনকৃত মুক্তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মতো তার।
এ বিষয়ে আব্দুর রহমানের বাবা কবির হোসেন জানান, ছেলের ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডে প্রথম থেকে সহযোগিতা করেছি। এখন তার সুফল ভোগ করছি। বাড়ির ছাদে রঙিন মাছের সঙ্গে কীভাবে মুক্তা চাষ হয়, তা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ছুটে আসছেন।
খুলনা দৌলতপুর থেকে প্রজেক্ট দেখতে আসা আমিনুর রহমান বলেন, এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভয়নগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ জানান, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোক্তাদের এমন নতুন নতুন উদ্ভাবনী আমরা প্রত্যাশা করি।
"