প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা কি সম্ভব

সম্প্রতি মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বহু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা। এর কয়েক মাস আগেই তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আঘাত করা দুটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল এবং আরো অনেক মানুষ আহত বা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ এসব ভূমিকম্প আঘাত করে। এ বিষয়ে কোনো সতর্কতা দিতে পারেনি সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান। ভূ-তত্ত্বকিদরা গবেষণা করছেন ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা দেওয়া যায় কি না। তাতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা যাবে। খবর বিবিসির।

চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে যখন তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তের মানুষের মাথার ওপর বাড়িঘর ভেঙে পড়ছিল, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই তখন ঘুমে। বড় কোনো দুর্যোগ আসতে যাচ্ছে এমন ইঙ্গিত ভূ-কম্প বিশেষজ্ঞরা বা এ ধরনের সংকেত নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা পান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সংবেদনশীল যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে। কারণ প্রথম দফা ভূমিকম্পের ফলে তৈরি হওয়া ভূ-কম্পন সারা বিশ্বকে নাড়া দেয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর ৭ দশমিক ৫ মাত্রার বড় আকারের দ্বিতীয় ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ আফটারশকের ফলে অঞ্চলটি ক্রমাগত কাঁপতে থাকায়, সেখানে বেঁচে যাওয়া বাসিন্দা ও উদ্ধারকর্মীদের ভূমিধস এবং পায়ের নিচ থেকে ভূমি সরে যাওয়ার মতো ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের বিশেষজ্ঞরা। তবে তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তের দুপাশে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সাহায্য প্রদানের জন্য যখন বিশ্ব ছুটছে, তখন কেউ কেউ ভাবছিলেন, কেন আমরা আগে থেকে এটা বুঝতে পারিনি।

পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট সিস্টেমের যেখানটায় ভূমিকম্প হয়েছিল সেটি টেকটোনিক তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলের একটি অংশ। এখানে আনাতোলিয়া, আরব এবং আফ্রিকা প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ অঞ্চলে ১৯৭০ সাল থেকে ছয় বা তার বেশি মাত্রার মাত্র তিনটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে এবং অনেক ভূতত্ত্ববিদ বিশ্বাস করতেন যে অঞ্চলটিতে একটি বড় ভূমিকম্প হওয়া বাকি ছিল। তাহলে কেন তারা আগেই সেটা বুঝতে পারেননি?

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কি পাওয়া সম্ভব? বাস্তবতা হলো, বৈজ্ঞানিকভাবে আগে থেকেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া খুবই কঠিন। যদিও একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রায়শই ভূকম্পনজনিত ডেটা বা তথ্যে মিনিটের সংকেত শনাক্ত করা যায়, তবে কী অনুসন্ধান করতে হবে সেটা বোঝা এবং পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং।

ইতালির রোমের সেপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানের এবং যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ম্যারোন বলেন, ‘যখন আমরা পরীক্ষাগারে ভূমিকম্পের পরীক্ষা চালাই তখন আমরা এইসব ব্যর্থতা দেখি- যেখানে প্রথমে কিছু ফাটল এবং কিছু ত্রুটি দেখা যায়। কিন্তু প্রকৃতিতে অনেক অনিশ্চয়তা থাকায় আমরা প্রায়শই বড় ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে বলে কোনো ইঙ্গিত পাই না।’

অন্তত ১৯৬০ সাল থেকে ভূতত্ত্ববিদরা ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পাওয়ার জন্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা করে গেলেও, তাতে সামান্য সফলতাই পেয়েছেন। পৃথিবীর অভ্যন্তরে অনবরত সংঘর্ষের কারণে প্রচুর পরিমাণে আওয়াজ হয় এবং এটি বেশ গর্জন করতে থাকে। এগুলো আবার রাস্তার ট্রাফিক, নির্মাণকাজ এবং দৈনন্দিন জীবনের কোলাহলের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় সেখান থেকে ভূমিকম্পের স্পষ্ট সংকেত বাছাই করা কঠিন হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, একটি সত্যিকারের ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জরুরি- এটি কোথায় ঘটবে, কখন ঘটবে এবং কত বড় আকারের হবে। সংস্থাটি বলছে, এখন পর্যন্ত কেউই নিশ্চিতভাবে এটি করতে পারেনি।

ভূমিকম্পের আগাম তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে গবেষকরা বিভিন্ন সংকেতের ওপর ভরসা করে থাকেন। জাপানে কেউ কেউ পূর্বাভাসের জন্য ভূমিকম্প অঞ্চলের ওপরে জলীয় বাষ্পের পরিবর্তন সম্ভব বলে দাবি করেন। পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে, এই পূর্বাভাসের ৭০ শতাংশ নির্ভুল, যদিও তারা কেবল বলতে পারেন যে পরের মাসে যেকোনো সময় ভূমিকম্প হতে পারে। অন্যরা পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণে মিনিটের তরঙ্গ যা ভূমিকম্পের আগে ঘটে থাকতে পারে, সেটি ব্যবহারের চেষ্টা করছেন।

চীনের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয় এবং রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উপগ্রহের মাধ্যমে ধারণ করা চিত্র থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ক্ষতিকে শ্রেণিবিন্যাস করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এমন সরঞ্জাম তৈরি করছেন, যাতে সরকার এবং উদ্ধারকারী দলগুলোকে যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেখানে পাঠানো যেতে পারে। এটি অ্যালগরিদম বা গাণিতিক পরিভাষা ব্যবহার করে ভবনের ক্ষতির মূল্যায়ন করে এবং সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া বা সম্ভাব্য বিপজ্জনক কাঠামো শনাক্ত করে গড়ার মধ্যমে। এমনও আশা করা হচ্ছে যে মেশিন-লার্নিং অ্যালগরিদমগুলো একটি বড় ভূমিকম্পের পরে আফটারশকের ক্ষেত্রে আরো ভালোভাবে পূর্বাভাস দিয়ে উদ্ধার কর্মীদের এবং ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close