নিজস্ব প্রতিবেদক
‘জাতীয় ঐকমত্য না হলে বিদেশিরা নাক গলানোর সুযোগ পাবে’

জনগণের স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিকল্প নেই। তা না হলে বিদেশি শক্তি বারবার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ পাবে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। একই সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর পথ বের করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, কোনো দেশের নির্দেশনা বাংলাদেশের মানুষ মানবে না। বরং যারা এই বিদেশিদের নির্দেশ মানবে, জনগণ তাদের মেনে নেবে না। কেননা এখানে বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশকে নিয়ে বিদেশিদের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ‘ভূ-রাজনীতির আলোচনায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও এডিটরস গিল্ডের প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্যামল দত্ত।
আলোচকরা বলেন, ভূ-রাজনীতির প্লেয়ার কিছু সংখ্যক দেশ। তারা নিজেদের স্বার্থে অন্য আরেকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। আর এই ভূ-রাজনীতিতে মার্কিনিদের বড় স্বার্থ হলো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমর্থন পাওয়া। অন্যান্য দেশকে নিজেদের সমর্থনে রাখার প্রক্রিয়া হিসেবে উপনিবেশ ব্যবস্থা চলে যাওয়ার পর সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। আর এই নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কিছু উপাদান লাগে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতাসহ আরো কিছু। এগুলোর মানও তারাই ঠিক করে দিয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, যখন তাদের পছন্দ মতো সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়, তখন তারা নিজেদের মতো আইন করে বিশেষ দলকে সুবিধা দেয়। এক্ষেত্রে তারাই যদি সরকার নির্বাচন করে তাহলে জনগণের ভোটাধিকার কোথায় থাকল?
ভূ-রাজনীতিতে টিকে থাকতে বাংলাদেশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে হবে জানিয়ে আলোচকরা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক দর্শন ও বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী প্রতিবেদনে দেখব যে, সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন বা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথা বারবার বলা হয়েছে। এখন ভূ-রাজনীতিতে আলোচনায় বাংলাদেশ। আর এই আলোচনা একটা কারণ হচ্ছে, আমরা ভৌগোলিক একটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। সেটা সব সময় ছিল। এখন আরো বেশি হচ্ছে, কারণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা। আর অর্থনীতির সঙ্গে রাজনীতির একটা সম্পর্ক আছে। এখন যেটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, আমাদের অর্থনৈতিক যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক ভিতটা শক্ত করতে হবে।
তবে বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো বাইরের দেশের নির্দেশনায় চলবে না। সেই পরিস্থিতিও নেই জানিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেন, গ্লোবাল ভিলেজের মধ্যে থেকেই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে, কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক রাখতে হবে। কিন্তু কারো নির্দেশনায় বাংলাদেশ চলবে এটা হতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণও তা মানবে না। আর তাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রের কথা বলা বন্ধ করতে আসন্ন নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক সচিব মোফাজ্জল করীম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার, সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন।
"