নিজস্ব প্রতিবেদক
শাপলা চত্বরে নিহত নিয়ে বিভ্রান্তি
অধিকারের আদিলুরের ২ বছরের জেল

মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
১০ বছর আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ও তথ্য বিকৃতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এ রায় দেওয়া হয়। এই মামলায় সংগঠনটির আরেক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন এলানকেও একই সাজা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাতযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশি অভিযানের পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ তুলেছিল যে পুলিশের অভিযানে ‘বহু মাদরাসার ছাত্র নিহত’ হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রচারণাও চালিয়েছিল সরকারবিরোধীরা। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করে ‘অধিকার’। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের ভাষ্য, ওই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর মামলা দায়ের করা হয় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিন এলানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘৬১ জনের তালিকা প্রকাশ করে তিনি শুধু বাংলাদেশ না বরং সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন। এটা অত্যন্ত জঘন্যতম একটা অপরাধ করেছেন মিথ্যা তথ্য দিয়ে।’
এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন আদিলুর রহমানের আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভূঁইয়া। শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ডিবি পুলিশ। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘেœর অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করে।’
আরো বলা হয়, ‘তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়।’
"