নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ এপ্রিল, ২০২৩

বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি

অপসাংবাদিকতা মেনে নেওয়া যায় না

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হলেও অপসাংবাদিকতা মেনে নেওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। টাকার বিনিময়ে শিশুকে দিয়ে কথা বলানোর বিষয়টিকে অপকর্ম ও নৈতিকতা বিবর্জিত অপসাংবাদিকতা হিসেবে উল্লেখ করে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, অভিনয় শিল্পীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

এক বিবৃতিতে তারা জানান, যারা প্রথম আলোর সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাকে বাক্্স্বাধীনতা তথা সংবাদপত্রের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে অপব্যাখ্যা করেন, যারা প্রকৃত সত্য না জেনেই বিবৃতি দিয়েছেন- তাদের অবস্থান শিশু অধিকারের বিরুদ্ধে, শিশুকে শোষণের পক্ষে, এটি বললে ভুল হবে না নিশ্চয়ই।

বিবৃতিদাতাদের মতে, ‘সংবাদমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আমরা সবাই শ্রদ্ধাশীল, তবে যদি তা সত্য ও গঠনমূলক এবং সাংবাদিকতার নীতিমালাবিরোধী না হয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের একটি শিশুকে প্রলুব্ধ করা, অর্থের বিনিময়ে প্রভাবিত করার মতো অপকর্ম মেনে নেওয়া যায় না। শিশু অধিকার সংক্রান্ত সব নীতিমালা, কনভেনশন, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবার, অর্থ দিয়ে শিশুকে প্রলুব্ধ করার নীতিবর্জিত অপসাংবাদিকতা গ্রহণ ও সমর্থনযোগ্য নয়। এটি নিশ্চয়ই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না।’

এতে আরো বলা হয়, একটি শিশুকে ১০ টাকা হাতে দিয়ে ওই সাংবাদিক যা বলতে বলেছে, শিশুটি তা-ই বলেছে। এর মাধ্যমে তিনি যা শেখালেন শিশুটিকে তা হলো- অর্থ দিয়ে বিবেক কেনা যায়, অর্থের কাছে মূল্যবোধ বন্ধক রাখা যায়, ?‘ইজি মানি’ নেওয়া কোনো অন্যায় না, টাকার বিনিময়ে যা খুশি তা-ই বলা বা করা যায়। এই শিশুটি স্কুলে যায়, তার ঘরে টিভি-ফ্রিজ সবই আছে। এই অবুঝ শিশুটি বোঝে না বিশ্বমন্দা কী? বোঝে না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কেন পড়ে? বোঝে না সিলিকন ব্যাংক কেন বন্ধ হলো? কেন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি স্টেট থেকে সোশ্যাল সেফটি নেট তুলে নেওয়া হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ তা বাড়াচ্ছে?

প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে অহরহ আলোচনা/সমালোচনা করে। সরকার তো তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি। এক্ষেত্রে শিশুটিকে দিয়ে কী বলানো হলো, এটিকে যারা মামলার কারণ হিসেবে ভাবছেন, তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন- এখানে বক্তব্যটি মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো, একটি শিশুকে অর্থের বিনিময়ে সে যে বিষয়ে কিছুই জানে না তা বলতে প্রলুব্ধ করা হয়েছে। শিশুটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে।

ইউনিসেফ বলছে, কোনো শিশুকে প্রচারমাধ্যমের মুখোমুখি করতে হলে তার কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে, তার অভিভাবকের সম্মতি নিতে হবে। পরে তাকে প্রচারমাধ্যমে দেখানো যাবে। এক্ষেত্রে এসব কিছুই করা হয়নি। শিশুটি সাংবাদিকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য স্কুলে বুলিং এবং সমাজে তিরস্কারের শিকার হবে। এভাবে নিজ স্বার্থ হাসিলে শিশুটিকে ব্যবহার অবশ্যই তাকে শোষণ করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শিশুটি যদি তিরস্কৃত বা বিব্রত হয়, তখন কি সাংবাদিক দায়িত্ব নেবেন? না, নেবেন না। তখন রাষ্ট্রকেই সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। যেমনটি হয়েছিল মানসিক প্রতিবন্ধী বাসন্তীর ক্ষেত্রে। তাকে টাকা দিয়ে শাড়ির ওপর জাল পরিয়ে (বাসন্তীর নিজ বক্তব্য অনুসারে) সাংবাদিক উধাও। কিন্তু ওই নারীকে পরবর্তীকালে সমাজ পরিত্যাগ করেছিল। তখন কিন্তু কোনো সাংবাদিক তার দায়িত্ব নেননি।

বিবৃতিদাতারা মনে করেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আর শিশুকে প্রলুব্ধ করা, ঘুষ দেয়া এক জিনিস নয়। প্রতিটি স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতা থাকে এবং কোথায় স্বাধীনতার মাত্রা শেষ হয় এবং একটি শিশুর স্বাধীনতার গন্ডিতে হস্তক্ষেপ হয়ে যায় এর প্রচ্ছন্ন পার্থক্য আছে, যা মানতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে সব শিশুর বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনকারীদের মুক্তি দিয়ে দিতে হবে কি’, প্রশ্ন রাখেন তারা।

পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, বীর প্রতীক জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জালাল, মুক্তিযোদ্ধা আহসানুল হক মীনু, মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর প্রতীক রফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা জাইবুল এনাম খান, মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুদ্দীন আহমেদসহ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা বিবৃতিতে সই করেছেন। এ ছাড়া বিবৃতিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, সংস্কৃতিকর্মী সাজু খাদেম, সংস্কৃতিকর্মী মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, মীর সাব্বির, পুনম প্রীয়ম, জ্যোতিকা জ্যোতি, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এবং একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানম, বীরপ্রতীক বাহারুদ্দীন, বীরপ্রতীক মিজানুর রহমান খান, বীরপ্রতীক আনোয়ার হোসেন পাহাড়ি, মুক্তিযোদ্ধা আবদুুল কাইয়ুম, অধ্যাপক সাদেকা হালিম প্রমুখ সই করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close