দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ

  ২৬ মার্চ, ২০২৩

গোপালগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্প

‘নিজের ঘর হবে স্বপ্নেও ভাবিনি’

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৭৯৫ নম্বর ঘরে আশ্রয় মিলেছে জন্ম থেকে পঙ্গু ষাটোর্ধ্ব ফিরোজা বেগমের। স্বামী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। এরপর আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে কাজ করে জীবন চালিয়েছেন এই বৃদ্ধা। মাঝে মধ্যে তাকে ভিক্ষাও করতে হয়েছে। এখনো প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করে, অন্যের দানে জীবন চলে। তবে মুজিবশতবর্ষে তিনি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। এতে আনন্দে কেঁদে ফেলেন ফিরোজা বেগম।

শনিবার (২৫ মার্চ) ফরোজা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার এই শেষ জীবনে শেখ হাসিনা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। ছেলে মেয়েহীন জীবনে নিজের ঠিকানায় থাকতে পারবো এটা কোনো দিন ভাবতে পারিনি। স্বামী থাকতেই পরের জায়গায় ঘর করে থেকেছি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো মতে চলেছি। কোনো দিন নিজের ঘর বা বাড়ি হবে, তা ভাবতেও পারিনি। যতদিন বাঁচবো তাঁর (শেখ হাসিনা) জন্য নামাজ পড়ে দোয়া করবো। তিনি যেন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন এবং দীর্ঘায়ু পান। ফিরোজা আরো বলেন, ‘২৫ বছর আগে স্বামী সত্তার মোল্লা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। শহরতলীর চরমানিকদাহ গ্রামে একটি সরকারি জায়গায় ঘর করে থাকতাম। সেখানে আশ্রয়ণের ঘর হয়েছে। স্যারেরা আমার কথা জানতে পেরে একটি ঘর দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় এই ঘর পেয়েছি’।

শুধু ফিরোজা বেগমই নয় অবেগ আপ্লুত হয়ে কণ্ঠ ভারি করেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের আক্তার মোল্লা বলেন, আমার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ১২ বছর বয়সে হঠাৎ জ্বর হয়। সেই জ্বরে আমার ছেলের মুখ বাকা, পা বাকা হয়ে যায়। মুখ দিয়ে লালা ঝরে। ১৫ বছর হলো সে খুবই অসুস্থ। এদিকে তাকে চিকিৎসা করাতে আমি দেনা হয়ে অসহায়। সম্পত্তি যা ছিল বিক্রি করে চিকিৎসা ও সংসার চালিয়েছি। সরকার আমার ছেলেকে ৮০৪ নম্বর ঘরটি দিয়েছে। এই জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি কোনোদিন ভুলতে পারবোনা। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন তার জন্য দোয়া করবো। তিনি যেন দীর্ঘায়ু লাভ করেন।

এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন আলেয়া বেগম (৭২) নামে এক অন্ধ নারী। তার স্বামী আকফর বিশ্বাস তিনিও অন্ধ। আগে শহরতলীর পোদ্দারেরচর গ্রামের অন্যের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করতেন। বিবাহিত জীবনের প্রায় ৪৫ বছর ভিক্ষা করে চলেছেন। কোনো দিন নিজের ঘর হবে এমন স্বপ্নও দেখেননি এই দম্পত্তি। জীবনের শেষ বয়সে এসে নিজের নামে ঘর হয়েছে। এটি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি এ জন্য শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনায় আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দীর্ঘায়ু কামনা করেন। শুধু এরাই নয় একাধিক সুবিধাভোগীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, আমরা নিম্নআয়ের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন চালাই। এই কারণে জমি কেনাতো দূরের কথা ঘর বানানোর স্বপ্ন দেখতে পারিনি। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আশ্রয়স্থল দিয়েছে এতে আমরা মহাখুশী। ওনার জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই। তাই যতদিন বাঁচবো নামাজ পড়ে শেখ হাসিনার জন্য মোনাজাত করবো। উনি যেন সুস্থ থাকে, ভালো থাকে।

উল্লেখ্য, বুধবার (২২ মার্চ) গোপালগঞ্জে ৫৪৩টি ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১৬৪টি, কোটালীপাড়া উপজেলায় ১২৯টি, সদর উপজেলায় ১১০টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ১০০টি ও মুকসুদপুর উপজেলায় ৪০টি ঘর বিতরণ কর হয়। দুই কক্ষ বিশিষ্ট এ ঘরে রয়েছে একটি বারান্দা, রান্না ঘর আর বাথরুম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার জমিসহ ঘর পেয়ে বদলে গেছে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জীবনমান। শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই নয় বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করে রোজগার হচ্ছে অর্থ। এতে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close