সাজাদুল ইসলাম, উলিপুর (কুড়িগ্রাম)

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ফেরত যাচ্ছে প্রকল্পের ১৬ কোটি টাকা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে টাকার বিনিময়ে সুবিধাভোগীদের নামের তালিকার জটিলতায় ফেরত যাচ্ছে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের ১৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের নীতিমালা লঙ্ঘন করে পুরোনো এই গরমিলের তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের নাম বাদ দিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে। নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ তালিকা নিয়ে চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে জটিলতায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তালিকা অনুমোদন হয়নি। ফলে ওই প্রকল্পের সুবিধাভোগী ৫ হাজার ৭১ জন অতি দরিদ্র মানুষ তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

গত বছরেও ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) পাইলট প্রকল্পের সোয়া ১৬ কোটি টাকা ফেরত গেছে। উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) কাজ এক যোগে শুরু করার জন্য নন-ওয়েজ খাতে বরাদ্দ প্রদান করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫ হাজার ৭১ জনের জন্য ১৬ কোটি ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গত বছর ১৩ নভেম্বর চিঠি দিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী পুরাতন সুবিধাভোগীদের বহাল রেখে যারা মৃত্যু, বয়স্ক, অক্ষম ও স্থান্তরিত হয়েছে তাদের নাম বাদ দিয়ে ওই পরিবার থেকে প্রতিস্থাপন করে তালিকা পাঠানো ও গত ২৬ নভেম্বর থেকে কর্মসূচির কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস প্রকল্পর নির্দেশিকা অনুযায়ী গত বছরের সুবিধাভোগীদের নাম ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকা চেয়ে চেয়ারম্যানদের চিঠি দেন। কিন্তু চেয়ারম্যানরা প্রকল্পের নীতিমালা লঙ্ঘন করে গত বছরের সুবিধাভোগীদের অর্ধেক নাম বাদ দিয়ে নতুন সুবিধাভোগীর নাম অন্তর্ভুক্ত করে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তালিকা জমা দেন। ফলে ওই তালিকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও চেয়ারম্যানদের মধ্যে জটিলতা শুরু হয়। চেয়ারম্যানদের দেওয়া তালিকা প্রকল্প নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় উপজেলা পরিষদ তা অনুমোদন করেনি। গত ২২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই তালিকা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরণ করে মতামত ও সিদ্ধান্ত চান। জেলা প্রশাসক গত ২২ জানুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করে তালিকা সংশোধন করার নির্দেশ দেন। তালিকা সংশোধন না হতেই গত ২৫ জানুয়ারি প্রকল্পের প্রথম ফেজের কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাহেবের আলগা ইউনিয়নের গোলামের চরের বাসিন্দা খৈইমুদ্দিনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম ও আবু বক্করের স্ত্রী বিলকিছ বেগম আগে থেকে ওই প্রকল্পে কাজ করছেন। তাদের কাছে মেম্বার টাকা দাবি করে না পেয়ে তাদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সাঈদ বলেন, মেম্বাররা টাকা নিয়েছে। আমাকেও অনেকে মন খুশি দিয়েছে। কারো কাছে দাবি করে নেইনি। থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, কর্মী খুশি রাখতে তাদের দেওয়া কয়েকটি নাম তালিকায় দেওয়া হয়। তারা কিছু টাকা পয়সা নিয়েছে। এখন শুনছি নতুন নাম সব বাদ যাবে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি প্রকল্প নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

সাহেবের আলগা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন বলেন, কেউ কেউ টাকা নিয়েছে শুনেছি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমি পুরাতনদের মধ্যে ১৫ ভাগ বাদ দিয়ে নতুন নাম তালিকা করে জমা দিয়েছি। এখন সব বাদ দিয়ে তালিকা চেয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও শেষ এখন কি হবে জানি না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌলা বলেন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের তালিকা পেয়েছি। প্রকল্পের নীতিমালার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। 

উপজেলা নিবার্হী অফিসার শোভন রাংসা বলেন, তালিকা সংশোধন করে জেলাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি কারো কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close