নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান

হুজির হাল আফগানফেরত মুজাহিদের হাতে

১৯৮৮ সালে আফগান যুদ্ধে গিয়েছিলেন মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮)। সেখানে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎও করেছেন। এরপর ভারত হয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। নব্বইয়ের দশকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি বি) সঙ্গে যোগ দেন। মুজাহিদ ফখরুল ২০০৫ সালেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে ছিলেন পলাতক। পলাতক থেকেই তিনি হুজির হাল ধরেন। এ সময় তিনি হুজির আরো সদস্য সংগ্রহ করেন। ঘরে বসেই বোমা তৈরি করে দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন তার নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়া হুজি। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তাররা হলো- মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), মো. সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (২৩), মো. দীন ইসলাম (২৫) ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন (৪৬)। এদের মধ্যে মো. সাইফুল ইসলামের বাবা মো. ফখরুল ইসলাম। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।

আসাদুজ্জামান বলেন, হুজির মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এই ফখরুল ইসলাম হুজির সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ফখরুল বলেছেন, তিনি গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদরাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি যান। পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মুফতি জাকির হোসেন পাকিস্তানের করাচিতে ইসলামিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল এবং আল-কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

মুফতি জাকির আল-কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার ছিলেন। জাকির জিহাদের দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত গ্রহণ করেন ফখরুল ইসলাম। জিহাদি প্রশিক্ষণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে যান ফখরুল ইসলাম। সেখানে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন তিনি। প্রশিক্ষণের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে-৪৭সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় চার ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক ‘পাহারা’ (ডিউটি) করতেন।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন ফখরুল তাদের কাছে বলেছেন, ওই সময়ে ফখরুল আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে আসেন। পরবর্তী সময় ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসেন।

সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অভিযান চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

ফখরুল নিজেই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতেন। এ জন্য তিনি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপ বিআইপি ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে বার্তা আদান-প্রদান করতেন। তারা যেকোনো সময় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন। বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিলেন গ্রেপ্তাররা। ফখরুল ও তার ছেলে গ্রেপ্তার আসামি মো. সাইফুল ইসলাম অন্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত করেন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে ভেড়াতেন। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন মোটা অঙ্কের অনুদান প্রদান করেন। অন্য আসামি হাফেজ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ ‘মোরা সত্যের সৈনিক’-এর অ্যাডমিন ‘অস্থায়ী মুসাফির’ হিসেবে ছদ্মনাম নিয়ে গ্রুপটি পরিচালনা করতেন।

আসাদুজ্জামান আরো বলেন, মো. আবদুল্লাহ আল মামুন অ্যাপসে নিজেকে মামুনুল হিসেবে পরিচয় দিতেন। হাফেজ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে বার্তা আদান-প্রদান করতেন।

নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতির’ কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক তথ্যচিত্র এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানো বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করা হয়। আবদুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড অ্যাপের চ্যানেল থেকে পাওয়া কনটেন্ট সংগঠনের পরিচিত দু-একজনকে হাতে-কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করতেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close