নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

চাষে আগ্রহী নন কৃষক

উৎপাদন কম আদা-রসুনে ভরসা আমদানিতেই

দেশে এক দশকের ব্যবধানে আদার চাহিদা পাঁচ গুণ, রসুনের তিন গুণ বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। বিপরীতে আদার উৎপাদন থেমে আছে প্রায় এক জায়গায়। রসুনের উৎপাদন কিছুটা বাড়লেও সেটা চাহিদার তুলনায় কম। এতে বাড়ছে আদা-রসুনের আমদানিনির্ভরতা। ডলার সংকটে বাড়ছে আমদানি খরচ। ভোক্তার পকেট থেকেও যাচ্ছে বাড়তি টাকা। মসলাজাতীয় পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার। সেটা কার্যকর হলে কিছুটা বাড়তে পারে উৎপাদন।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমানে দেশে আদার চাহিদা সাড়ে চার লাখ টন এবং রসুনের চাহিদা প্রায় ৯ লাখ টন, যা এক দশক আগের তুলনায় যথাক্রমে পাঁচ ও তিন গুণ ছাড়িয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে আদার উৎপাদন থমকে রয়েছে। এই এক দশক ধরে উৎপাদন মাত্র ৮০ হাজার টনের সামান্য এদিক-সেদিক করছে মসলাটি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ৭৭ হাজার টন আদা উৎপাদন হয়, যা ২০১৯-২০-এ এসে সর্বোচ্চ ৮৪ হাজারে উঠেছিল। ২০২১-২২ এ কমে আবার ৮২ হাজার টনে নেমেছে। একই অবস্থা রসুনেরও। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে সাড়ে তিন লাখ টন রসুন উৎপাদন হয়।

এক দশক বাদে এখন উৎপাদন ঠেকেছে ৫ লাখ ১৬ হাজার টনে। ঠিক একই সময়ের ব্যবধানে চাহিদা বেড়েছে তিন গুণের বেশি।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত জাতের অভাব, দীর্ঘমেয়াদি জীবনকাল ও উঁচু জমির ফসল বলে এ দুই ফসলে খুব বেশি আগ্রহী নন চাষিরা। আবার উৎপাদন খরচের চেয়ে মসলার বাজারদর কম হওয়াও বড় কারণ।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ঢাকার বাজারদরের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আদার দর বেড়েছে ১২২ শতাংশ পর্যন্ত। রসুনের দাম বেড়েছে ১১০ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে যথাক্রমে ৫৩ ও ৬০ শতাংশ।

এসব বিষয়ে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারকেন্দ্রিক মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানিকারক ও বিক্রেতা আবদুল মাজেদ বলেন, দেশি আদা-রসুনের চেয়ে এখন বিদেশির (আমদানি) চাহিদা বেশি। সে কারণে কখনো আনতে সংকট হলেই দাম বেড়ে যায়। এখনো ডলারের কারণে আমদানি ঘাটতি, বাজারে সে প্রভাব পড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে রসুনের মৌসুম ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আদার মৌসুম ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি- দুই মাস। এ সময় আদা-রসুনের দাম পাইকারি ২০-৩০ টাকার মধ্যে নেমে যায়। যে কারণেও চাষিরা আগ্রহ হারান।

এ বিষয়ে নীলফামারী সদরের কৃষক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ছয় মাস ধরে এসব মসলা চাষ করে দাম পাই না। আবার চাষের জন্য ভিটার জমি লাগে। অন্য ফসল লাভজনক এখন। সে কারণে কয়েক বছর আদা-রসুন করছি না।

যে পরিমাণ অর্থ আদা-রসুন আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে এর ৫০ ভাগের এক ভাগ কৃষককে ভর্তুকি সহায়তা দিলে বর্তমান উৎপাদন তিন থেকে চার গুণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান। তিনি বলেন, অনাগ্রহের ফসলগুলো প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলে সেগুলো চাষের জন্য কৃষককে আগ্রহী করতে হবে, তাদের বাজারদর নিশ্চিত করতে হবে, আমদানির ব্যয় বিবেচনায় প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।

মসলা চাষ বাড়াতে প্রকল্প : চাষাবাদ বাড়াতে ‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে গত বছর। মসলার আমদানিনির্ভরতা কমাতে ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ২ লাখ ৩৬ হাজার টন মসলা উৎপাদন বাড়বে। ফলে মসলার আমদানিনির্ভরতা কমবে।

জানা যায়, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পটি জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের ১১০টি উপজেলা ও ২৫টি হর্টিকালচার সেন্টারে এটা বাস্তবায়ন করা হবে। আধুনিক-টেকসই প্রযুক্তি ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের মাধ্যমে মসলাজাতীয় ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণ, মসলা ফসল সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদনোত্তর অপচয় হ্রাস এবং শস্য নিবিড়তা বাড়ানো হবে ২ থেকে ৫ শতাংশ। মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন জাত প্রচলন করা হবে।

প্রকল্প পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বাজেটের অর্থও একদম কম পাওয়া গেছে। তারপরও প্রদর্শনীর কাজ করে যাচ্ছি। এখন ন্যাশনাল ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে সময় রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ প্রকল্পের সময়কালে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মসলার আবাদ ৫ শতাংশ বাড়বে। পাশাপাশি মসলা উৎপাদন বাড়বে দুই লাখ ৩৬ হাজার টন। মানুষের মসলার ক্যালরির চাহিদা পূরণ হবে। কমবে আমদানিনির্ভরতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close