হাসান জাবেদ, আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আশুগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ইউপি চেয়ারম্যানের কফি হাউস

দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম তীর্থ ভূমি। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরের এই স্মৃতিস্তম্ভটি দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি চক্র। স্মৃতিস্তম্ভের দেয়াল ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা দোকান-ঘর। স্মৃতিস্তম্ভের মূল অবকাঠামোকে পেছনে ফেলে এমন অবৈধ দখলের কারণে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে।

ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা জানান, উপজেলার চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইজুর রহমান ছয়জন মেম্বারের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ গোলচত্বরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ দখল করে পাকা দোকান-ঘর নির্মাণ করছেন। ভেঙে ফেলা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভের নিরাপত্তা দেয়াল। স্মৃতিস্তম্ভের মূল অবকাঠামোকে পেছনে ফেলে তৈরি করা হচ্ছে পাকা দোকান-ঘর। অথচ এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা স্থানীয় কোনো মুক্তিযোদ্ধাই ওয়াকিবহাল নন। একটি চক্র নিজেদের স্বার্থে এমন অপকর্ম করছে বলে দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর ফোরাম আশুগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল করিম বলেন, একাত্তরের ৯ ডিসেম্বর আশুগঞ্জে ভারতীয় মিত্রবাহিনী-মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে ১০ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ মুক্ত হয়েছিল। এই যুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মিত্রবাহিনীর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেই স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বাজেটে বহু বছর আগে সম্মুখ সময়ের স্মৃতিস্তম্ভ বানিয়েছি। প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ উপজেলাবাসী স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে আশুগঞ্জ মুক্ত দিবস পালন করে। কিন্তু কতিপয় প্রভাবশালী মহল সেটি দখল করে বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। এটি মুক্তিযোদ্ধারা কখনোই মেনে নেবে না।

মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গীর খন্দকার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ কেউ দখল করবে, আর সেটা দেখব এমনটি কখনোই ভাবিনি। এসব দেখার আগে মরে যাওয়া ভালো ছিল। এজন্য যুদ্ধ করিনি। শেষ ইজ্জতটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতি স্তম্ভের দেয়াল ভেঙে সেখানে দ্রুত দোকান নির্মাণকাজ চলছে। স্মৃতি স্তম্ভটির সামনেই রাখা হয়েছে ইট, বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী। এ সময় চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আবুল কালামকে দোকান নির্মাণকাজ তদারকি করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নে দোকান ও কফি শপ করা হবে। আমাদের সঙ্গে দুজন মুক্তিযোদ্ধাও পার্টনার রয়েছে।

তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গীর খন্দকার ও মো. আবদুল করিমসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নের বিষয়টি একটি প্রতারণা। এ ব্যাপারে কোনো মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পরামর্শ হয়নি। আমরা সরকারি জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভের অনুমতি নিয়েছি। এখানে কাউকে ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়াম্যান হানিফ মুন্সিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই। তার চোখের সামনে এই সব কী করে হচ্ছে।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আশুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার অরবিন্দ বিশ্বাসের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি মাত্র জানতে পারলাম। দ্রুতই দখলদারদের উচ্ছেদ ও কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, চরচারতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফাইজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে জানা যায়, তিনি চিকিৎসাজনিত কারণে ভারতে রয়েছেন। তার হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close