প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০২২

৭১-এর এই দিনে যেসব এলাকা হানাদারমুক্ত

কুমিল্লার দাউদকান্দি ও পাবনার সাঁথিয়ায় ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়। এছাড়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এবং গাইবান্ধার সাঘাটার হানাদারমুক্ত দিবসের খবর দিয়েছেন প্রতিনিধিরা-

তিতাস (কুমিল্লা) : ১৯৭১ সালের এই দিনে দাউদকান্দি (বর্তমান দাউদকান্দি-মেঘনা-তিতাস উপজেলা) পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণের মুখে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটতে শুরু করলে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা মানসিকভাবে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে উঠে। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, শহিদনগর ওয়ারল্যাস কেন্দ্রে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাউদকান্দিস্থ ডাকবাংলোতে অবস্থানরত পাক সেনাদের টার্গেট করে উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্ব হতে এক যোগে আক্রমণ শুরু করে।

বৃহত্তর দাউদকান্দির মোহাম্মদপুর, ডাকখোলা, গোয়ালমারী, বাতাকান্দি প্রভৃতি এলাকার ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হতে থাকে, পূর্ব দিক হতে মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে পাক সেনারা পশ্চিম দিকে হটতে থাকে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর জনসাধারণ উত্তর দিকে গোমতী নদীতে আতঙ্কিত অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।

৮ ডিসেম্বর রাত থেকে ৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধের পর পাক সেনারা দাউদকান্দিতে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল সড়ক ও জনপথের বাংলোতে উঠে এবং সেখান থেকে লঞ্চযোগে মেঘনা নদী দিয়ে গজারিয়া হয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়। দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা দাউদকান্দি পৌঁছে হানাদারমুক্ত দাউদকান্দিতে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উড়ায়।

বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) : ১৯৭১ সালের এ দিনে থানার নন্দনপুর ও জোড়গাছায় পাক সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখেযুদ্ধের পর সাঁথিয়া থানা সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদের নির্দেশে সাঁথিয়া হাইস্কুলের তৎকালীন শিক্ষক রুস্তম আলী, তোফাজ্জল হোসেন, কাশীনাথপুর হাইস্কুলের শিক্ষক আয়েজ উদ্দিনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এলাকার ছাত্র ও তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। সাঁথিয়া হাইস্কুল মাঠে তারা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। সেনাসদস্য কাজী মোসলেম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন। দীর্ঘ ৯ মাস সাঁথিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, নজরুল ইসলাম (চাদু), আবদুস সামাদ, দারা হোসেন, শাহজাহান আলীসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ শহিদ হন।

সাঁথিয়ার সংগ্রামী জনতা ২৭ মার্চ সাঁথিয়া থানা আক্রমণ করে অস্ত্র লুট করে নেয়। ১৯ এপ্রিল সাঁথিয়ার পাইকরহাটির ডাব বাগন (শহীদ নগর) যুদ্ধে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয় মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ ও বিডিআর। ওই যুদ্ধে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ২০০ গ্রামবাসী শহীদ হন।

২৬ সেপ্টেম্বর সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৯ জন রাজাকারকে হত্যা করে এবং অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ৯ নভেম্বর ফরিদপুর উপজেলার কালিয়ানী গ্রামের যুদ্ধে সাঁথিয়ার ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ীতে পাকসেনারা বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ১০০ গ্রামবাসীকে পুড়িয়ে, গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ৮ ডিসেম্বর সকালে সাঁথিয়ার প্রায় ৪০০ মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হয়ে সাঁথিয়া থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। পরদিন ৯ ডিসেম্বর পুনরায় পাকসেনারা সাঁথিয়া প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকসেনারা পিছু হটে পাবনা চলে যায়। এভাবে ৯ ডিসেম্বর সাঁথিয়া থানা হানাদার মুক্ত হয়।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সাঘাটা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিজয় র‌্যালি, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ম্যুরাল চত্বরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহীন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আজহার আলীর সভাপতিত্বে ও বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌতম চন্দ্র মোদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ আলী সরদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হুদা দুদু প্রমুখ।

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) : তৎকালীন দৌলতপুর থানায় পাক হানাদারদের সঙ্গে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ সংগঠিত হয় ৯ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিন আদবাড়িয়া ইউনিয়নের ব্যাঙগাড়ি মাঠে। সেখানে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ২ জন মিত্রবাহিনীর সদস্য শহীদ হন। এ যুদ্ধে ৩ শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। ২৬ নভেম্বর পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর মাঠে পাকহানাদারদের সঙ্গে আরেকটি বড় যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব শহীদ হন। এ যুদ্ধে প্রায় শতাধিক পাকসেনা ও প্রায় দুই শতাধিক আলবদর ও রাজাকার নিহত হওয়ার পর পাকসেনা ও রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং দৌলতপুর থানার অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়। বাধ্য হয়ে ৭ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে পাকসেনারা পালিয়ে কুষ্টিয়ার শহরতলী জগতি ও বটতৈল এলাকায় আশ্রয় নেয়। ১৯৭১ এর আজকের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলনের মাধ্যমে দৌলতপুরকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close