খুলনা ব্যুরো

  ৩০ নভেম্বর, ২০২২

খুলনাবাসী অতিষ্ঠ মশার উপদ্রবে

শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে দিন-রাত মশার অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করছে খুলনাবাসী। বাসা-বাড়িতে অনেকেই সারা দিন মশারি টাঙিয়ে রাখছেন। নিস্তার পাচ্ছে না অফিস-আদালত থেকে অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা। বিভিন্ন উপায়ে মশা দমনের চেষ্টা চলছে। সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা রক্ষা পাওয়া গেলেও মশার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। মশারি, কয়েল ও ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না নগরীর বাসিন্দারা।

এদিকে আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল খুলনায়। মশার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা। পরিস্থিতি এগিয়ে যাচ্ছে চরম পর্যায়ে। সংশ্লিষ্টরা খুলনাকে ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে নির্দিষ্ট করছেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, কেসিসি থেকে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধের ধোঁয়া দিয়ে গেলেও মশার উপদ্রব কমছে না। বরং ফগার মেশিনের ধোঁয়ার ধাক্কায় ড্রেনে থাকা মশাগুলোও ছড়িয়ে পড়ে। মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন নাগরিক নেতারা।

কেসিসির দাবি, মশক নিধনের নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ চলছে। কোনো কার্যক্রম থেমে নেই। নগরীর বসুপাড়ার বাসিন্দা মো. ইয়াহিয়া বলেন, সাধারণ সময় মশা থাকে। শীত শুরু হতেই এর উপদ্রব বেড়েছে ব্যাপকহারে। দিনে-রাতে সমানতালে মশার অত্যাচার চলছে। বাসায় শিশু ও বয়স্কদের জন্য সারা দিন মশারি টাঙিয়ে রাখতে হয়। রাতে কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট- কিছুই মানে না।

নিরালা এলাকার বাসিন্দা নেয়ামুল বারি হুজাইফা বলেন, দিন দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। খুলনা সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে নির্বিকার। সিটি করপোরেশন মাঝে মধ্যে ওষুধ ছিটায় কিন্তু মশা মরে না।

এদিকে ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সোলাইমান নগরের গৃহিণী সুমনা মামুন। তিনি বলেন, একটা জায়গায় পাঁচ মিনিট দাঁড়ানো যায় না, মৌমাছির মতো মশা ঘিরে ধরে। কেসিসি থেকে যে ওষুধ ছিটানো হয়, তার কি কোনো কার্যকারিতা আছে?

নগরবাসী বলছেন, সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। প্রতিনিয়ত মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। মশার উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত ড্রেন ও সুয়ারেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে দিনের পর দিন ফেলে রাখায় তাতে পানি জমে। যা মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। মশা নিধনে প্রত্যেক এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব রয়েছে। নিজ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মশামুক্ত করতে তাদের উদ্যোগী হতে হবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক সম্প্রতি মশা নিধনের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। খুলনার প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনের বিষয়ে জোর সুপারিশও করেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়ছে না। মাঠ পর্যায়েও এমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি, যা উদ্বেগজনক।

খুলনার নাগরিক নেতা মিজানুর রহমান বাবু বলেন, মশার উৎপাত ভয়াবহ বেড়েছে। নগরীতে নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। অথচ প্রতি বছর মশা মারার জন্য সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। মাঝে মধ্যে নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তাতে মশা মরে না। বরং তাড়া খেয়ে মশা ঘরে ঢুকে যায়। অবিলম্বে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি। কেসিসির কনজারভেনসি কর্মকর্তা নূরুন্নাহার এনি বলেন, নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে একই মশক নিধনকর্মী ফগার মেশিনের মাধ্যমে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা চলছে। বর্তমানে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় আরো ৩৬ কর্মীকে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close