নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ অক্টোবর, ২০২২

জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস আজ

লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি আত্মনির্ভরতা

‘দারিদ্র্য আমাদের প্রধান শত্রু। দারিদ্র্য দূর করতে হলে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। খাদ্য-বস্ত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে’- এই বার্তা নিয়েই আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর ২ অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের শিল্প, কৃষি ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোই দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

উৎপাদনশীলতা বাড়লে শ্রমিকরা বেশি মজুরি পাবেন। মালিকরাও অধিক মুনাফা পাবেন। ভোক্তারা পাবেন সস্তায় মানসম্মত পণ্য ও সেবা। সর্বোপরি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ফলে সরকারের আয় বাড়বে, শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন সহজ হবে।

দেশে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সরকারের ১০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এর আওতায় প্রতি বছর গড়ে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হারে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

প্রবৃদ্ধি সংগঠিত হয় শ্রমশক্তি, প্রাকৃতিক সম্পদ, ভৌত ও মানব পুঁজি সঞ্চয়, প্রযুক্তির পরিবর্তন ইত্যাদির অবদানের কারণে। অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে, উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি ঘটলে মানুষের কর্মসংস্থান, আয় ও জীবনকুশলতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা জাগে এবং এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আবার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ঘটায়। সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয় যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্থির থাকলে জাতীয় আয় বৃদ্ধিসাপেক্ষে সমাজে সবারই কিছু না কিছু আয় বৃদ্ধি ঘটে, যা অন্য অনেক সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই আয় বৃদ্ধি দরকার, যদিও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ঘটলেই জনগণের উন্নয়ন ঘটবে, এটা নিশ্চিত নয়। এজন্যই বলা হয়ে থাকে যে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি উন্নয়নের দরকারি শর্ত পূরণ করে, তবে যথেষ্ট শর্ত পূরণ করে না। এজন্য কেবল উন্নয়ন নয়, টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হয়। কিন্তু উন্নয়ন যাত্রায় ব্যাপক অগ্রগতি সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এখনো অনেক বাধা রয়ে গেছে। একইভাবে টেকসই উন্নয়নের পথেও রয়ে যাচ্ছে অনেক বাধা।

বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই প্রবৃদ্ধির গতিপথ ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদে বৃদ্ধির হারকে আরো ত্বরান্বিত করতে এখন একটি শক্তিশালী সংস্কার এজেন্ডা প্রয়োজন। এজন্য প্রবৃদ্ধির কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে বলেও মনে করছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের অ্যাকটিং ডিরেক্টর ড্যানড্যান চেন বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০টি দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। তবে এতে বাংলাদেশের আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করে চেন বলেন, নতুন এবং উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলোসহ প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির পরিবর্তনশীল মনোযোগের জন্য নতুন নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভাবনের দাবি রাখে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চণ্ডমধ্যম আয়ের দেশের রূপকল্প অর্জনের জন্য বাংলাদেশের শক্তিশালী এবং রূপান্তরমূলক নীতি পদক্ষেপের প্রয়োজন হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, বৃহত্তর ঢাকা দেশের জিডিপির এক-পঞ্চমাংশ এবং আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের প্রায় অর্ধেক উৎপন্ন করে। কিন্তু জলবায়ু অভিবাসীদের সমস্যা সমাধানের জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এই রাজধানী এখনো অপ্রস্তুত।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, উন্নত নগরায়ণ এবং সংযোগ জলবায়ু অভিবাসীদের সুরক্ষা দেওয়া এবং দ্রুত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। আর তাই সফল নগরায়ণের অর্থ হবে ছোট এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আকৃষ্ট করা। মাঝারি আকারের শহরগুলোকে দক্ষ কর্মীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনসহ অবকাঠামো বিনিয়োগ এবং পরিষেবার বিধানের জন্য শহরগুলোকে তাদের নিজস্ব রাজস্ব বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, অর্থনীতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির বিপরীতে আশা দেখাচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন। তাই দ্রুত ব্রডব্যান্ড গতি বৃদ্ধি করা এবং মৌলিক পরিষেবাগুলো আরো সহজলভ্য করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close