নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্ব অহিংস দিবস আজ
শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু এবং মহাত্মা গান্ধী
আজ আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা এবং অহিংসার দর্শন ও কৌশলটির প্রবর্তক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে দিবসটি পালন করা হয়। শিক্ষা ও জনসচেতনতার মাধ্যমে অহিংসার বার্তা প্রচার করাই দিবসটির লক্ষ্য।
অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা, অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের জনক, মহাত্মা গান্ধীর শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন বিশ্বে শান্তি ও মানবতার আন্দোলনের নেতাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের প্রাক্কালে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনকে নতুন মাত্রা ও ব্যাপ্তি প্রদান করেছিলেন, যা পাকিস্তানের ২৪ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনযন্ত্র সম্পূর্ণ অচল করে দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই মহান নেতা বিশ্বে শান্তি ও মানবতার বার্তা প্রচারে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
গান্ধী তার জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের বৃহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং নিজের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে তা অর্জন করেছিলেন। তিনি তার আত্মজীবনীর নাম দিয়েছিলেন ‘দি স্টোরি অফ মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ’, যার বাংলা অর্থ ‘সত্যকে নিয়ে আমার নিরীক্ষার গল্প’।
গান্ধীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল নিজের ভেতরকার অন্ধকার, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতাকে কাটিয়ে ওঠা। রাষ্ট্র পরিচালনায় গান্ধী ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি ধর্ম পালন করতেন এবং ধর্মের মানবিক ধারার প্রচারক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সব ধর্মই ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং ধর্মের সারকথা-মানবপ্রেম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা মুসলিম লীগ থেকে হলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে ছাত্রজীবনে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও জিন্নাহর ধর্মীয় দ্বিজাতি-তত্ত্বের অসারতা ও প্রতারণা তিনি এই সাম্প্রদায়িক কৃত্রিম রাষ্ট্র সৃষ্টির এক বছরের ভেতরই উপলব্ধি করেছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করেছেন। গান্ধী, মার্টিন লুথার ও ম্যান্ডেলার মতো অহিংসবাদী নেতারা যেভাবে বারবার কারাবরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তিনি পাকিস্তানের কাঠামোর ভেতর ছয় দফার মাধ্যমে স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের ধারণা জনপ্রিয় করেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
অপরদিকে গোপনে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামের প্রেরণা তিনি পেয়েছেন সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, বাঘা যতীন এবং সর্বোপরি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কাছ থেকে। নেতাজীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগের কথা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে রয়েছে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধু যে নীতি ও কৌশল অবলম্বন করেছিলেন সেখানে তার পূর্বসূরি দুই নেতা গান্ধী ও সুভাষ বসুর মিলিত প্রভাব ছিল বটে, তবে তিনি এই দুই নেতার শান্তি ও সংগ্রামের রণনীতি নিজের মতো গ্রহণ করেছিলেন।
"