নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ অক্টোবর, ২০২২

১ অক্টোবর ১৯৭১

মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিন

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১ অক্টোবর গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন নিউ ইয়র্কের চার্চ সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ৩টি শর্ত ছাড়া কোনো আলোচনা হতে পারে না। এ ৩টি শর্ত হচ্ছে- বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া হোক, অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক এবং বাংলাদেশ থেকে ইয়াহিয়ার হানাদার দখলদার বাহিনীর অপসারণ হোক। তা না হলে কোনো সমাধান বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

এ ছাড়া, জাতিসংঘ এদিন পাকিস্তানের আপত্তির কারণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের লাউঞ্জে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। সাংবাদিক ও দর্শনার্থী প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহি বেশ কয়েক দিন আগে এ বিষয়ে লিখিত আপত্তি জানিয়েছিলেন।

ঢাকায় এদিন : জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শান্তি কমিটির নেতা পীর মোহসেনউদ্দিন। এদিন এপিপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রাদেশিক সমবায়, মৎস্য ও সংখ্যালঘুমন্ত্রী আউং শু প্রু বলেন, দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে বলে ভারত যে প্রচারণা চালিয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তাদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করছে। ১ অক্টোবর চীনের ২২তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চ্যাং ইং বলেন, বহিরাগত কোনো অপশক্তি যদি পাকিস্তানে আক্রমণ করার ধৃষ্টতা দেখায়, তবে পাকিস্তান ও চীন তার সমুচিত জবাব দেবে। চীন সব সময় পাকিস্তানের পাশে আছে।

ভারতে এদিন : দিল্লিতে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগোর্নির সম্মানে ভারতের প্রেসিডেন্ট ভি ভি গিরির দেওয়া ভোজসভায় নিকোলাই পদগোর্নি বলেন, ভারতের যেকোনো প্রয়োজনে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাশে আছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভবিষ্যতেও একই রকম থাকবে। পূর্ববাংলার বিষয়টি সোভিয়েত ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই জাতিসংঘে উত্থাপন করেছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে।

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন : নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালেক ডগলাস হোম বলেন, নিঃসন্দেহে পাকিস্তন-ভারত পরিস্থিতি গুরুতর রূপ লাভ করেছে। অচিরেই এই পরিস্থিতির নিরসন ঘটবে বলে আমি মনে করি না। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে গেরিলা তৎপরতা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে আমরা শঙ্কিত। সম্প্রতি কয়েকটি রিলিফবাহী জাহাজের ক্ষতি করা হয়েছে। ফলে শিপিংব্যবস্থায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের সঙ্গে বৈঠক করেন অ্যালেক ডগলাস হোম। এ সময় তারা শরণার্থী সমস্যা সমাধান ও বাংলাদেশের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। এদিন সন্ধ্যায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালেক ডগলাস হোমের সঙ্গে দেখা করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়া পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতা মাহমুদ আলী।

এদিন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা ‘প্রাভদা’তে সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেই নিবন্ধে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও কারখানা শ্রমিকদের প্রতি সদয় আচরণ করার অনুরোধ করা হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পাকিস্তানি ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াত নেতা এ টি সাদী। বৈঠকে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান। বেশ কয়েকজন ব্রিটিশমন্ত্রী ও হাউস অব কমন্সের এমপির সঙ্গে বৈঠক করার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী কমিটির চেয়ারম্যান ডিপি ধর মস্কো থেকে লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি জমান।

সারা দেশে প্রতিরোধ যুদ্ধ : নওয়াবগঞ্জের মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণকারী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে মুক্তিবাহিনী। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা সমগ্র নওয়াবগঞ্জ থানা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। যুদ্ধে বেশ কয়েকজন হানাদার সেনা নিহত হন। আহত হন ৩০ জন হানাদার ও রাজাকার।

ময়মনসিংহের ভালুকা, কাশীগঞ্জ ও ত্রিশাল থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৩টি দল বাইন্দা ও বড়াইদ এলাকার দিকে অগ্রসর হলে, আফসার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার কাশেমের নেতৃত্বে কছিমউদ্দিন, মনেরউদ্দিন ও হাফিজুর রহমানের মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর পথ রোধ করে। এ সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হানাদার বাহিনীর যুদ্ধ হয়। প্রায় ১৭ ঘণ্টার এ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ৭১ জন সেনা ও রাজাকার নিহত হয়। অসংখ্য হানাদার সেনা আহত হয়।

সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র ষষ্ঠ, দশম, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close