আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিশ্ব পর্যটন দিবসে মৌলভীবাজারে কমছে পর্যটক

উঁচু-নিচু পাহাড়, সুউচ্চ টিলাভূমি, বহমান প্রাকৃতিক জলরাশি, অসংখ্য চায়ের বাগান, আদিবাসী পল্লী, ইকোপার্ক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্‌যান, বিস্তৃীর্ণ হাওর- এমন নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি মৌলভীবাজার। পর্যটনের আকর্ষণীয় স্পট রয়েছে এখানে। এ জেলাকে পর্যটন জেলা ঘোষণা করা হলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। ফলে দিন দিন এখানে পর্যটকের সংখ্যা কমছে।

সরকারি হিসেবে গত এক বছরে অন্তত ৫০ শতাংশ পর্যটক এই জেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। মৌলভীবাজারের বিশিষ্ট নাগরিকরা মনে করেন পর্যটন খাতের এই দুরবস্থার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা দায়ী। তাদের অভিযোগ, মুখে পর্যটন জেলা আর কয়েকটি মতবিনিময় সভা করেই দায় এড়ানো হচ্ছে। এভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা চলে আসবে না। এজন্য প্রয়োজন কার্যকর অনেক পদক্ষেপ যা এখানে নেই।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৭ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা নিয়ে মৌলভীবাজার জেলার আয়তন ২ হাজার ৭৯৯ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ২০ লাখ, এরমধ্যে ৪৫ হাজার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। দেশের ১৬৭টি বাণিজ্যিক চা বাগানের ৯৩টির অবস্থান মৌলভীবাজার জেলায়। চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার জেলায় আছে দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, কালাপাহাড় ও হাম হাম জলপ্রপাত। এ ছাড়া মুড়াইছড়া, মাধবকুণ্ড ও বর্ষীজোড়া ইকোপার্ক এই জেলায় অবস্থিত। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্‌যান ও মাধবপুর লেক, গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্টসহ আরো অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) আসামণ্ডবাংলা রেলপথ, কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন ও শমসেরনগর বিমানঘাঁটি এই জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। এশিয়ার পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হাকালুকি, কাউয়াদিঘী ও হাইল হাওরের অবস্থান মৌলভীবাজার জেলায়।

বাংলাদের পর্যটন করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের বেশ কিছু উদ্যোগ সত্ত্বেও দিন দিন এখানে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো দিন দিন দর্শকশূন্য হয়ে পড়ছে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক, মাধবপুরলেকসহ এখানের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট এখন দর্শনার্থীদের অভাবে অনেকটা খাঁ খাঁ করছে। পাশাপাশি ধস নেমেছে এখানের হোটেল মোটেল রেস্টুরেন্ট ব্যবসাসহ পর্যটনে সম্পর্কিত ব্যবসা বাণিজ্য।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য মতে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্‌যানে গত রোজার ঈদে ৮ দিনে এসেছিলেন ৩৪ হাজার পর্যটক। কিন্তু কোরবানির ঈদে এসেছেন মাত্র ৭ হাজারের মতো। ২০২১ সালের ২০ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেখানে ১০ হাজার ৩৭২ জন পর্যটক এসেছিলেন। সেখানে এ বছর একই সময়ে এসেছেন মাত্র ৩ হাজার ৮৩১ জন। অনুরূপভাবে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ২০২১ সালের ২০ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসেছিলেন ৩৩ হাজার ২১২ জন সেখানে এবছর একই সময়ে এসেছেন ২৫ হাজার ২৪১ জন।

মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ মাহবুব এ প্রসঙ্গে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, একজন পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য যা যা প্রয়োজন সবই আছে আমাদের। চা শ্রমিক খাসিয়া মনিপুরি গারো হাজংসহ ১৭টি আদিবাসী গোষ্ঠীর বসবাস এখানে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক, হাওর নদী টিলা পাহাড় সবই আছে এই মৌলভীবাজারে। একই সঙ্গে এত বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশ দেশের আর কোথাও নেই। পর্যটন জেলাও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত পর্যটকদের আকর্ষণে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য দুটি বাস চালু করেছে। কিন্তু পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য যে মানের বাস প্রয়োজন, সে চাহিদা মিটছে না। এ ছাড়া হয়নি সড়ক মহাসড়ক। নেই কোনো দৃশ্যমান প্রকল্প। আঞ্চলিক সড়কে যাতায়াত করতে হয় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্পটে সহজ যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তাই এত দর্শনীয় স্পষ্ট থাকার পরও পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) স্থানীয় সমন্বয়কারী আ স ম সালেহ সোহেল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, পর্যটন জেলা করার যে কথা বলা হচ্ছে পুরোটাই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। কোথাও তো কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখি না। পর্যটন জেলা হলে তো সেভাবে হোটেল মোটেল গেস্টহাউস রাস্তাঘাট অফিস আদালত হতো।

জাতীয় পার্টি (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাস খান বলেন, এখানে দর্শনীয় স্থানগুলোর প্রচার প্রচারণা নেই। গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। তাই পর্যটকদের বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আরো একটু অপেক্ষা করেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। বড়লেখা উপজেলার হাল্লা পাখিবাড়ির সংরক্ষণ ও উন্নয়নে ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের তাড়াতাড়ি টেন্ডার হবে। এ ছাড়া বর্ষীজোড়া ইকোপার্ক, লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্‌যানের উন্নয়নের জন্য বড় আকারের একটি প্রকল্প আমরা বন ভবনে জমা দিয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close