আফ্রিকার দেশগুলোতে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগ খুবই সাধারণ একটি বিষয়। তার মধ্যে কেনিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলেছে, আফ্রিকার ৬ লাখ ম্যালেরিয়া রোগীর মধ্যে শুধু কেনিয়াতেই পাওয়া গেছে ১২ হাজার ৫০০ রোগী। দেশটিতে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য রোগটি মরণঘাতী হিসেবে দেখা দিয়েছে। এখন এই রোগ থেকে পরিত্রাণের একটিই উপায়- তা হলো কার্যকর টিকা আবিষ্কার করা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থেকে বাঁচতে বিশ্ববাসীকে আর খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এ রোগের কার্যকর টিকা আবিষ্কারের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ম্যালেরিয়া রোগীদের অপেক্ষার প্রহর ফুরিয়ে আসছে। তারা শিগগিরই সুসংবাদ পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে ম্যালেরিয়ার একটি টিকাকে প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। শিগগিরই এ টিকার দ্বিতীয় দফায় ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা করোনার টিকা ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা’ আবিষ্কার করে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা আরটিএসএস টিকার আশাব্যঞ্জক কার্যকারিতা দেখা গেছে। এটি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ৩৯ শতাংশ কার্যকর এবং গুরুতর অসুস্থ ম্যালেরিয়া রোগীর ক্ষেত্রে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু নতুন টিকা ‘আর-২১’ আরো বেশি আশার বার্তা বয়ে এনেছে। প্রথম দফায় এ টিকার কার্যকারিতা ৭৫ শতাংশ অতিক্রম করেছে। ২০১৯ সালে বুরকিনা ফাসোতে পরীক্ষামূলকভাবে এ টিকা ব্যবহার করার পর ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারিতা দেখা গেছে। আফ্রিকার আরো চারটি দেশে এ টিকার পরীক্ষামূলক ব্যবহার চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রায়াল শেষে বড় ধরনের সফলতার খবর পাওয়া যাবে। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বলেছে, তারা বছরে ২০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা তৈরির জন্য প্রস্তুত আছে। ম্যালেরিয়াকে পরাজিত করার জন্য এই প্রস্তুতি মোটেও কম নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ২০২০ সালে আফ্রিকায় আনুমানিক ২২৮ মিলিয়ন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছিল, যা বিশ্বের সব ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৫ শতাংশ।

কেনিয়ার কেমরি ওয়েলকাম ট্রাস্টের ক্লিনিক্যাল রিসার্চের প্রধান এবং ম্যালেরিয়ার নতুন টিকার তৃতীয় দফা ট্রায়ালের প্রধান তদন্তকারী মাইঙ্গা হামালুবা বলেছেন, আর-২১ টিকার আশ্চর্যজনক অগ্রগতি দেখা গেছে। পরবর্তী ট্রায়ালের পর আমরা নিশ্চিত হতে পারব।

মাইঙ্গা হামালুবা আরো বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে আর-২১ টিকা ব্যাপকভাবে ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেনার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যাড্রিয়ান হিল বলেন, আর-২১ টিকা ব্যবহারের কারণে আগামী বছর থেকে ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুহার বহুলাংশে কমে আসবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে মৃত্যুহার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে।

"