নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জুন, ২০২২

ফের পুরোনো চিন্তায় লঞ্চ মালিকরা

পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে সড়কপথে খুবই কম সময়ে ঢাকাসহ দেশের অন্য এলাকায় যাতায়াত করতে পারছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। এত দিন যে লঞ্চই ছিল যাতায়াতের মূল ভরসা এখন সে লঞ্চে স্থান নিয়েছে সেতু। ফলে দীর্ঘদিনের পরিবহন সেবা খাত লঞ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চিন্তা নতুন করে করতে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের। তবে লঞ্চ ভাড়া কম, নিম্ন আয়ের মানুষের যাতায়াত, সড়কপথ পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে এখনই চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যাত্রী সংকটের চেয়ে নদীর নাব্য নিয়েই তাদের যত চিন্তা।

নৌপরিবহন খাতে বিনিয়োগকারীরা বলেন, লঞ্চের যাত্রা যেমন আরামদায়ক, তেমনি নিরাপদ। আবার রাতের যাতায়াতে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় না। একটি লঞ্চে দেড়-দুই হাজার যাত্রী পরিবহন করা যায়। এত যাত্রী সড়কপথে পরিবহনে ৩৫ থেকে ৪০টি বাসের প্রয়োজন। কিন্তু এ অঞ্চলের সড়কগুলো এখনো তেমন প্রস্তুত নয়। তাই ভবিষ্যতেও নৌপথের জনপ্রিয়তা থাকবে। এ ছাড়া লঞ্চ খাতে পর্যটনকেন্দ্রিক বিনিয়োগেরও চিন্তাভাবনা আছে তাদের। লঞ্চ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলাচল করে।

সবচেয়ে বড় লঞ্চগুলো চলে ঢাকা-বরিশাল রুটে। এ রুটে ভায়াপথ মিলিয়ে অন্তত ২৫টি লঞ্চ চলাচল করে থাকে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার (যাপ) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুন্দরবন নেভিগেশনের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের আশার প্রতীক। কিন্তু সেতু চালু হলেও লঞ্চে যাত্রী কমবে না। কারণ বাসে ঢাকা থেকে বরিশালে যেতে মাথাপিছু কমবেশি ৬০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। বিপরীতে লঞ্চে ভাড়া মাত্র ২৫০ টাকা। এ ছাড়া লঞ্চযাত্রা সাশ্রয়ী, ক্লান্তিহীন ও আরামদায়ক।

লঞ্চে ঢাকা-বরিশাল নিয়মিত যাতায়াত করেন বরিশাল নগরীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাজ্জাদুল হক। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও প্রতিষ্ঠানের কাজে মাসে চার থেকে পাঁচবার বরিশালে যাতায়াত করি। জরুরি না হলে লঞ্চেই বেশি যাতায়াত করি। আমার মনে হয় না, পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে খুব একটা প্রভাব পড়বে। সাজ্জাদুল হক আরো বলেন, লঞ্চে যাতায়াতে ঝুঁকি কম, সময় নষ্ট হয় না। ভ্রমণও খুব আরামদায়ক। এ ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে লঞ্চ যাত্রায় অভ্যস্ত। তবে সেতু চালু হওয়ায় ভ্রমণের সময় এক-তৃতীয়াংশ কমে এসেছে। এতে স্বাভাবিকভাবে সড়কপথে যাতায়াত বাড়বে। নৌপথে আগের মতো আর যাত্রীর চাপ থাকবে না। এ ক্ষেত্রে লঞ্চে যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

লঞ্চ যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বরিশাল নৌ যাত্রী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ বলেন, পদ্মা সেতু লঞ্চ ব্যবসার জন্য কিছুটা হলেও মন্দাবস্থা তৈরি করবে। তবে লঞ্চ মালিকরা আন্তরিক হলে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এজন্য লঞ্চে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর ভাড়া হতে হবে সহনীয়। যাত্রীদের বিমার ব্যবস্থাও করা উচিত।

বরিশাল অঞ্চলের লঞ্চ খাতে বিনিয়োগকারী আরেক ব্যবসায়ী সুরভি নেভিগেশনের পরিচালক রেজিন-উল কবির। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিয়মিত যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে পর্যটনে লঞ্চ অনেক বড় অবদান রাখবে। ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে সুন্দরবন, কুয়াকাটা, চর কুকরি, হরিণঘাটা, চেংরাগিরিসহ অন্যান্য এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য অনেক ব্যবসায়ী লঞ্চে বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা করছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক ও বন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর আপাতত লঞ্চ ব্যবসার ঝুঁকি আছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে না। কারণ এসব লঞ্চের আয়ের বড় উৎস হচ্ছে নিম্ন আয়ের যাত্রী, যারা ডেকে কম খরচে আরামে যাতায়াত করেন। তারা দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দিয়ে বাসে যাতায়াত করবেন না। তবে কেবিনে হয়তো যাত্রী কমবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লঞ্চ ব্যবসায়ীরা পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এখনো আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো আবেদন জমা হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close