নিজস্ব প্রতিবেদক
টিকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াল বাংলাদেশ
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রথমে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানালেও পরে তা কমিয়ে ৭০ শতাংশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
গত রবিবার পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচির ১৬ মাসে প্রথম ডোজ গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮০৯ জন; যা জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ কোটি ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৫ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৭০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সেই হিসাবে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১ কোটি বেশি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দ্বিতীয় ডোজেও।
এদিকে, জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে পাঁচ থেকে বারো বছর বয়সি শিশুদের ফাইজার টিকা দেওয়া হবে। এজন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘যাদের জন্মনিবন্ধন নেই, তাদের এটি করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
অন্যদিকে বাংলাদেশকে ফাইজারের আরো ৪০ লাখ রেডি টু ইউজ ডোজ টিকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে বাংলাদেশকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের টিকার পরিমাণ দাঁড়াল ৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি।
গতকাল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ডোজগুলো বাংলাদেশ সরকারকে সারা দেশে টিকাদান ও বুস্টার প্রচারণা সম্প্রসারণ এবং কোভিড-১৯ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০’-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। সুতরাং মোট জনসংখ্যার দেশের ৭০ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সেই হিসাবে ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে টিকা প্রাপ্তির কথা থাকলেও প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮০৯ জন বেশি মানুষ এসেছে প্রথম ডোজের আওতায়। আর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮ লাখ ২৯ হাজার ২৪৫ জন অতিরিক্ত মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত ছয় ধরনের টিকার দুই ডোজ মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৪ কোটি ৮১ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪ ডোজ। টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার ৪১৬ জন। ফাইজারের দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ৮ হাজার ৭০১, সিনোফার্ম দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ২৬০ জনকে, সিনোভ্যাক দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৮১৫ জনকে, জনসন অ্যান্ড জনসন দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ১২১ জনকে এবং মডার্না দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৩২ জনকে। এরমধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে শুধু ভাসমান জনগোষ্ঠীকে। তাছাড়া ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকার দুই ডোজ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ২২ হাজার ৮৩৭ জনকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বলেছে। প্রথম ডোজ ৭৫ শতাংশ হয়ে গেছে, দ্বিতীয় ডোজ ৭০ শতাংশ। এটা আমাদের জন্য আরেকটি মাইলফলক। যারা টিকা এখনো নেয়নি, তাদের অবশ্যই টিকা নিতে হবে।’
"