নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ জুন, ২০২২

খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৩ শতাংশ

আরো দরিদ্র হচ্ছে মানুষ

দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরিব মানুষের ওপর চাপ আরো বেড়েছে। খাদ্য কিনতেই তাদের আয়ের সিংহভাগ খরচ করতে হচ্ছে, যা তাদের আরো দরিদ্র অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি এখন সবচেয়ে বেশি, ৮.৩ শতাংশ; যা আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, মে মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭.৪২%-এ পৌঁছায়। এ হার গত আট বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৪৮%। এ ঘটনাকে ‘মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন’ বলা হচ্ছে। মে মাসের আগের চার-পাঁচ মাস এটা ৬%-এর কাছাকাছি ছিল। নিত্যপণ্য বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি এতটা বেড়েছে। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি ৮.৩%। এপ্রিলে যা ছিল ৬.২৩%।

বিবিএসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে ১০.৯১%। মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৭.৪২% হলেও, গ্রামে এই হার ৭.৯৪% আর শহরে ৬.৪৯%।

সেন্টার ফর পলিসি ডয়ালগের (সিপিডি) বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতি আর তার সঙ্গে ডলারের সঙ্গে যে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে তার প্রভাব এখানে দেখা যাচ্ছে। আর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যেরও দাম বেড়েছে।

তার মতে, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেও দাম বেড়েছে। এটা আমদানি ও উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত। বাজারে নানা ধরনের কারসাজি, সিন্ডিকেট, মজুদদারি এগুলো ঘটেছে। এখানে নজরদারির অভাব ছিল। সাধারণ মানুষ প্রধানত যে ভোগ্যপণ্যগুলো কেনেন তার মূল্যস্ফীতি গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি। প্রান্তিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বা স্থির আয়ের যারা আছেন তারা যেসব পণ্য বেশি কেনেন তার দাম বেশি বেড়েছে। ফলে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বেশি হারে বেড়েছে। এর প্রধান কারণ এ সরকারের উদ্যোগগুলো ব্যবসায়ীবান্ধব, জনবান্ধব নয়। বাজারে চাল, তেলসহ অনেক পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এসব সিন্ডিকেট ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এখন যা পরিস্থিতি তাতে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা না হলেও জরুরি পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরো বাড়বে। যারা নিম্ন আয়ের তাদের তো খাদ্য কেনার সামর্থ্যই কম। এখন দেখা যাবে আয়ের ৯০%-ই খাদ্য কিনতে ব্যয় করতে হবে। তাতেও সে পর্যাপ্ত খাদ্য পাবে না।

মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত খাদ্যব্যয় বাড়াতে পারবে। এর আরেকটি নেতিবাচক প্রভাব আছে নন-ফুড আইটেমের ওপর।

মানুষ ফ্রিজ, টেলিভিশনের মতো আরো অনেক জিনিস কেনা কমিয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাব এ ধরনের শিল্পে এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এটাও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে আপাতত সংকটের মধ্য দিয়েই আমাদের যেতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close